শিক্ষকের যৌন হয়রানিতে অতিষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর এক ছাত্রী। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী ও তার মা। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
ছাত্রীর পারিবারিক সূত্র জানায়, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর (১৪) বাড়ি লোহারটেক গ্রামে। বেশ কিছুদিন যাবৎ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান তাকে যৌন হয়রানি করে আসছিল। গত ৪ জুলাই প্রধান শিক্ষক ওই ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এ ঘটনা সহপাঠীরা জেনে ফেলায় লজ্জায় অপমানে নির্যাতিত ছাত্রীটি বাড়িতে গিয়ে সমস্ত বই পুস্তক ছিড়ে ফেলে। এরপর থেকে সে আর স্কুলে যায়নি। বিষয়টি পরিবারে জানাজানি হলে লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি গোপন রাখে। পরে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ওই স্কুলছাত্রী ও তার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সামছুল আলম তার কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে ডেকে শুনানি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সামছুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
হয়রানির শিকার স্কুলছাত্রীর মা জানান, প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান স্কুল চলাকালীন ও প্রাইভেট পড়ানোর সময় একাধিক দিন তার মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। প্রধান শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মাতুব্বর, নেতাকর্মী ও প্রশাসনের দ্বারস্থ না হয়ে তিনি সরাসরি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ পেশ করেছেন।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার শুনানির দিন এলাকার প্রায় অর্ধশত মাতুব্বর ও নেতাকর্মী নিয়ে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন এবং অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তার উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি নির্যাতিত ছাত্রীর চাচা মাতুব্বর তৈয়বুর রহমান মীরকেও প্রধান শিক্ষক তার দলে নিয়ে এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন নাহার বলেন, অভিযোগের তদন্ত করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক স্যার। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান জানান, স্কুলে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো ছাত্রীর যৌন নির্যাতন করা সম্ভব না। স্থানীয় একটি চক্র ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে এবং তারাই ওই ছাত্রীকে উসকানি দিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।