রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে, খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নিয়ম মেনে চলতে হবে- এই সমস্যার কথা আমরা অনেকেই শুনি। কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর এটাও মোটামুটি সবার জানা। কিন্তু এই কোলেস্টেরল কখন, কীভাবে এবং কেনই বা আমাদের শরীরে জমে? এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। সেই বিষয়গুলোর জানাবো আজ:
কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরল মূলত এক ধরনের চর্বি। এই কোলেস্টেরল মোটামুটি চারভাগে ভাগ করা যায়- ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টেরল। এগুলোর এর মধ্যে একটা উপকারী হলেও বাকি তিনটি শরীরের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।
কোলেস্টেরল নিয়ে এতো শঙ্কার কারণ হলো, এটি জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকখানি।
এই কোলেস্টেরল যেকোনো রক্তনালিতে জমা হতে পারে। যেমন মস্তিষ্ক, লিম্বস আক্রান্ত করতে পারে, ব্লকও করতে পারে। যদি হৃৎপিণ্ডে কোলেস্টেরল জমে তাহলে হার্ট অ্যাটাক হবে, যদি লিম্বসে হয় তাহলে হাঁটতে ব্যাপক সমস্যা হবে। আর মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উপকারী কোলেস্টেরলও আছে
তবে ভালো কোলেস্টেরল হলো এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন)। এটি শরীরের পেরিফেরি থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে লিভারে নিয়ে যায়। পরে লিভার দিয়ে এটা বেরিয়ে যায়। তাই এটা বেড়ে গেলে সেটা আমাদের জন্যই উপকারী। এই ভালো কোলেস্টেরল কমে গেলে ওজন বাড়তে থাকে। এটি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ডায়বেটিস। আর যে কারণে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের পরিমাণ বাড়ে, ঠিক সেই কারণেই উপকারী ডায়বেটিসের পরিমাণ কমে। এই উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ানোর উপায় হলো নিয়মিত হাঁটা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাছ বেশি খাওয়া।
কেন হয় কোলেস্টেরল
আমাদের শরীরে যে পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে তার মাত্র ৩ ভাগের ১ ভাগ আমরা খাবার থেকে গ্রহণ করি। কোনো রকম কোলেস্টেরলপ্রবণ খাবার গ্রহণ নাও করলেও শরীর নিজেই প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল উৎপাদন করতে সক্ষম। তা দিয়েও শরীর চলবে।
রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও অসম খাদ্যাভাস। অধিক মাত্রায় আনসাচুরেটেড চর্বি জাতীয় খাবার এজন্য দায়ী। এই আনসাচুরেটেড ফ্যাট বা অসম্পৃক্ত চর্বি থাকে লাল মাংস, বাটার কুকিজ, ফার্স্ট ফুড, চিপসসহ বিভিন্ন খাবারে। ধূমপান ও শরীরের বাড়তি মেদ, রক্তের ভালো কোলেস্টেরল কমায়।
কখন হয় কোলেস্টেরল এবং এর ঝুঁকি
সাধারণ নারী ও পুরুষের বয়স ৫০ বছর পার হলে স্বাভাবিক নিয়মে কোলেস্টেরল খানিকটা বাড়তে পারে। এ বয়সে জীবনযাপন পরিবর্তন করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
কোনো দম্পতির যদি অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে তাহলে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। এমনকি একজনের কোলেস্টেরল লেভেল বেশী থাকলেও সন্তান ধারণে সময় বেশী লাগতে পারে। জুটিটির। আর গর্ভবতী নারীদের প্রাকৃতিকভাবেই অন্যদের তুলনায় কোলেস্টেরল বেশি থাকে। তবে সন্তান গর্ভে গড়ে উঠতে এবং জন্মদানের জন্যেও প্রচুর কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয়।