কিডনির রোগ হলে শরীর কিছু সংকেত দেয় এবং একই সঙ্গে মূত্রের রঙ পরিবর্তনও হতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির অক্ষমতায় রেনাল টিউবিউলসের ক্ষতি হয়, যা পলিইউরিয়ার সৃষ্টি করে। এর মানে হচ্ছে- আপনার অধিক পরিমাণে মূত্র তৈরির কাজ করে। তবে কিডনির অক্ষমতা যত বৃদ্ধি পাবে, মূত্রের পরিমাণ ততই কমবে। এবং মূত্রের রঙ গাঢ় হলুদ কিংবা কমলা রঙ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মূত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ও অত্যধিক ফেনা হতে পারে।
যদি কারো হঠাৎ করে এ রকম সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে সমস্যা অল্প থাকতেই চিকিৎসার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। আসুন কিডনি সমস্যার কিছু লক্ষণ জেনে নেয়া যাক। বিস্তারিত নিম্নে দেয়া হল-
শ্বাসকষ্ট : যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশিরভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এ বর্জ্য যখন রক্তের সঙ্গে ফুসফুসে পৌঁছায়, তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। যার কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এ থেকেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।
দুর্বলতা : কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এরিথ্রোপ্রোটিন উৎপন্ন করতে পারে না। এই হরমোন বোনম্যারো থেকে ব্লাডসেল উৎপাদনে সাহায্য করে। এ ছাড়া দুর্বলতা কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এই দুর্বলতা আসে রক্তশূন্যতা থেকে। কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করতে পারে, তা হলে রক্ত ক্রমাগত দূষিত হতে থাকে। যার কারণে রক্তে নতুন করে ব্লাডসেল উৎপন্ন হয় না।
চোখ ঝাপসা ও মানসিক অস্থিরতা : শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা ও ঝাপসা দেখা- এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয়, তা হলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। এতে রোগীর কোমাতেও চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অরুচি : শরীরের বর্জ্য পদার্থের আরেকটি উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া। যদি অ্যামোনিয়া রক্তে মেশে তা হলে তা শরীরে প্রোটিন নষ্ট করে ফেলে। কিডনির অক্ষমতায় শরীর বর্জ্য হিসেবে অ্যামোনিয়া ফিল্টার করতে পারে না। রক্তে অত্যধিক পরিমাণের অ্যামোনিয়ার কারণে অরুচি হয়।
শরীরে ব্যথা : কিডনি ও লিভারে এক ধরনের ফ্লুইড ভর্তি সিস্ট বা গুটির সৃষ্টি হয়। এই সিস্টের মধ্যে থাকা ফ্লুইড এক ধরনের বিশেষ টক্সিন বহন করে, যা শরীরের শিরা বা ধমনীগুলোতে ক্ষতি করতে পারে। একাধিক শিরার বা ধমনীর ক্ষতি হলে তা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। ভোঁতা অনুভূতি, খোঁচা কিংবা জ্বলুনির মতো হতে পারে।
শরীরে চুলকানির উপসর্গ : কিডনির অক্ষমতায় শরীরে প্রিউরিটাস দেখা দেয়। প্রিউরিটাস আসলে চুলকানির মেডিকেল নাম। শরীরের রক্তে যখন বর্জ্য পদার্থ মিশতে শুরু করে, তখন চুলকানির উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ ওই বর্জ্যের মধ্যে ফসফরাস থাকে। যেসব খাবারে ফসফরাস থাকে যেমন দুধজাতীয় খাবার, সেগুলো হজমের পর ফসফরাস বর্জ্য হিসেবে মূত্রের সঙ্গে বের হতে পারে না। যার কারণে এটি রক্তে মিশে চামড়ায় চুলকানি সৃষ্টি করে।