বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কার্ডিওলজিস্ট ড. রামিন শাকুর চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক অনবদ্য যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। তার এ আবিষ্কারের কারণে এখন থেকে চিকিৎসক ছাড়াই জানা যাবে নিজের হার্টের অবস্থা। বুকে ব্যথা অনুভবের সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে হবে না চিকিৎসকের কাছে। নিজের হার্টের ইসিজি নিজেই করা যাবে।
সম্প্রতি ‘রিয়েল টাইম ইসিজি’ নামের একটি ডিভাইস আবিষ্কার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনবদ্য সংযোজন ঘটিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজিস্ট ড. রামিন শাকুর।
ড. রামিন শাকুর বলেন, ‘ইসিজি হাসপাতালে গিয়ে করতে হয়। আমার এই ডিভাইসটির কারণে রোগী নিজেই নিজের ইসিজি করতে পারবেন। এই ডিভাইসটির কারণে চিকিৎসকের কাছে রোগী বুকে ব্যথা নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে এটি সাজেস্ট করতে পারবে। রোগী এটি বাসায় নিয়ে গেলে নিজের বুকের ব্যথার রেকর্ড সে নিজেই নিতে থাকবে। আর এটি ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসক দেখতে পারবেন।’
তিনি জানান, ‘রিয়েল টাইম ইসিজি’ নামের এই ডিভাইসটি পৃথিবীর প্রথম মাল্টিপল ইসিজি এবং অক্সিজেন টেম্পারেচার ও জিপিএস সিস্টেমে তৈরি করা হয়েছে। ডিভাইসটি দিনে ১৪ থেকে ১৫ জন মানুষ ব্যবহার করতে পারেন। মূলত ওয়্যারলেস চার্জিং হওয়ায় এটাতে কোনও ধরনের তার লাগে না চার্জ করতে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের যেকোনও স্থান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে এই ডিভাইস দিয়ে হার্টের চিকিৎসা করা যায়।
এই আবিষ্কার সম্পর্কে ড. রামিন শাকুর বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে পড়াচ্ছি। তিন বছর সময় লেগেছে এটি তৈরি করতে। এটির মার্কেটিংয়ের জন্য আমরা ক্যামব্রিজ হার্টওয়্যার নামে একটি কোম্পানি খুলেছি।’
ড. রামিন শাকুরের ক্যামব্রিজ হার্টওয়্যার টিমের অন্য সদস্যরা হলেন প্রফেসর রবার্তো কিপোলো, ডা. জেমস চার্লস, ডা. রবার্ট লো।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য এবং আফ্রিকাতে এটির ট্রায়াল শুরু হয়েছে। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলের মানুষ চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হৃদরোগে মারা যায়। সেখানকার সরকার এবং এনজিও উভয়েই এই ডিভাইসটি ব্যবহার করতে চাচ্ছে। তারা বলেছে এটির মাধ্যমে অনেকের জীবন নিরাপদ করা সম্ভব হবে।’
তিনি জানান, আফ্রিকায় এটি সরকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে। আর যুক্তরাজ্যে এই ডিভাইসটি ২০০ পাউন্ড মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
ড. রামিন শাকুর বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ছেলে হয়ে চাই আমার দেশের মানুষ এটি ব্যবহার করুক। তবে এটি নিয়ে আমি সেভাবে ব্যবসা করতে চাই না। আমি জানি আমাদের দেশের মানুষের দুভাবে অর্থ খরচ হয়। তারা একবার শহরে আসে। আবার চিকিৎসা ব্যয় করে। এই দুটো ব্যয় এই ডিভাইসের মাধ্যমে কমানো সম্ভব হবে। আমি চাই সরকারিভাবে আমার এই ডিভাইসটি দেশের মানুষের জন্য নেওয়া হোক।’
‘রিয়েল টাইম ইসিজি’তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক হৃদরোগীদের ইসিজি দেখে ডায়াগনোসিস করে। আমি নিজে একজন কার্ডিওলজিস্ট। গত পাঁচ বছর ধরে এই বিষয় নিয়ে পিএইচডি করেছি। এই ডিভাইসটি দিয়ে চিকিৎসক ছাড়াই যেকোনও মানুষ তার হার্ট পরীক্ষা করতে পারবে তাদের মোবাইল আপস ব্যবহার করে। ফলে পৃথিবীর যেকোনও স্থান থেকে রোগীরা সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাল্টিপল ইসিজি ডিভাইসের মাধ্যমে সেবা নিতে পারবেন।’
ড. রামিন শাকুরের বাবা তসলিম শাকুর যুক্তরাজ্যের এজ হিল ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার। মোবাইলে তিনি বলেন, ‘ওর (রামিন শাকুর) যখন এক বছর বয়স তখন ওকে নিয়ে আমি যুক্তরাজ্যে চলে আসি। ওর ডিভাইস দেশে চালু হলে ভালোই লাগবে।’
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘রোগীর নিজে নিজে ইসিজি করাতো ডিফিকাল্ট। তার ডিভাইস সম্পর্কে আমি জানি না। জিনিসটা দেখলে বলতে পারতাম আসলে উনি ঠিক কীভাবে কী করবেন।’
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন