আমাকে ‘যৌ’নদাসী’ করে রাখতে চেয়েছিল চেয়ারম্যান শাহ আলম (ভিডিও)

স্ত্রীর মর্যাদা চাইতে গিয়ে ঝালকাঠি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারজানা ববি নাদিরা (২৫) জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান নাদিরা। বুধবার রাতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেন তিনি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তার মনে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। সেই সঙ্গে জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন নাদিরা।

ফারজানা ববি নাদিরা বলেন, সরদার মো. শাহ আলম আমাকে যৌনদাসী বানিয়ে রাখতে চেয়েছেন। অধিকার চাওয়ায় তিনি ও তার স্ত্রী আমাকে মারধর করেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেও জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বাসায় চলে আসি। চাকরি করতে গিয়ে বাবার বয়সী লোকটার কাছে ইজ্জত হারিয়েছি। এখন জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। এই কলঙ্ক নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব? স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কি-না জানি না।

নাদিরা বলেন, জেলা পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করি আমি। চেয়ারম্যান শাহ আলমের (৭২) সঙ্গে দীর্ঘ ৩ বছরের সম্পর্ক আমার। প্রথমে প্রেম, তারপর সেই প্রেম শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। শাহ আলম আমাকে ভালোবাসেন। তিনি বলেছেন যতদিন বেঁচে থাকবা ততদিন আমার হয়েই থাকবা। দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিয়ের কথা বলে আসছি। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি বরাবরই এড়িয়ে যান শাহ আলম। বুধবার সকালে আমি জেলা পরিষদে যাই। ওনাকে বলি, দেখেন পরিস্থিতি তো খুব খারাপ। আপনার তো সবই আছে। কিন্তু আমার কী হবে, আমার তো কিছুই থাকবে না। এ অবস্থায় আপনি আমার জন্য কী করবেন? তখন শাহ আলম বলেন, তুমিই বলো তোমার জন্য আমি কি করতে পারি। তখন আমি বিয়ের কথা বলি।

ওই সময় শাহ-আলম বলেন, আমার পক্ষে তো আর তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি কতদিন আর বাঁচব, আমি তোমাকে বিয়ে করে তোমার ফিউচার (ভবিষ্যৎ) নষ্ট করতে চাই না। আমি বলেছি, ফিউচার লাগবে না, এখন যে অবস্থা আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারেন। আমার ফিউচার লাগবে না। আপনি আমাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। আমি মান-সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমার পরিবার আছে, সেখানে স্থান পাচ্ছি না। এসব জানলে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে। এসব কথা বলার পর চেয়ারম্যান আমাকে বলেন, এসব বাদ দিয়ে তোমার কি লাগবে বলো?। আমি বলছি আমার কিছুই লাগবে না। আমি শুধু আপনার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা চাই।

এর মধ্যে বিকেলে চেয়ারম্যানের স্ত্রী শাহানা আলম এসে অফিসে ঢুকে আমাকে বাজারের মেয়ে বলে মারধর করেন। সেই সঙ্গে চেয়ারম্যানকে ওনি বলেন, চল চল, বাসায় যাই। এ সময় আমি বলি, আপনারা যে যাচ্ছেন আমাকে কি বলে যাচ্ছেন। আমি তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে তারা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে জেলা পরিষদের গাড়ি নিয়ে চলে যান।

ফারজানা ববি নাদিরা অভিযোগ করে বলেন, জেলা পরিষদে যখনই চেয়ারম্যানের আমাকে প্রয়োজন হয়েছে, তখনই আমাকে ডেকেছেন। যেখানেই যেতেন, আমাকে নিয়ে যেতেন। তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার লঞ্চে ঢাকায় গেছি। তার সঙ্গে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়া এবং একত্রে থাকা হয়েছে। আমি আমার ন্যায্য অধিকার চাই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝালকাঠি শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মাহবুব হোসেন বলেন, সরদার মো. শাহ আলম ভালো মানুষ। জেলা বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি, জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। যার দায়িত্ব বেশি তার শত্রুও বেশি। তাই তার বিরুদ্ধে এটি ষড়যন্ত্র বলে আমার মনে হয়। এর আগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠেনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর তরুন কর্মকার বলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। চক্রান্ত করে সুকৌশলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার মো. শাহ আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে উদ্যেশ্যমূলকভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। গতকাল বুধবার জেলা পরিষদে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান শাহ-আলমের কক্ষে অবস্থান নিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দেন নাদিরা। বিকেল ৩টার দিকে জেলা পরিষদে হাজির হন শাহ-আলমের স্ত্রী জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী শাহানা আলম। তিনি সরদার শাহ আলমের কক্ষে ঢুকে নাদিরার ওপর চড়াও হন। সেই সঙ্গে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে থাপ্পড় মারতে মারতে তাকে রুম থেকে বের করে দেন শাহানা আলম।

এ সময় অনেক লোকজন জড়ো হন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান শাহ আলম ও স্ত্রী শাহানা আলম গাড়িতে উঠে জেলা পরিষদ ত্যাগ করতে চাইলে নাদিরাও তাদের গাড়িতে উঠতে চেষ্টা করেন। এ সময় নাদিরাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেন চেয়ারম্যানের স্ত্রী। রাগে-ক্ষোভে জেলা পরিষদের দোতলার ছাদে উঠে সেখান থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নাদিরা। এ সময় কয়েকজন যুবক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতারা নাদিরাকে ধরে ফেলেন। পরে আহত নাদিরাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।