পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক তদন্তে এক অভিনেত্রীসহ তিন নারী ও অন্তত ৮ জনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে রহমতউল্যাহ নামে একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ; আটক করা হয়েছে আফরিন নামে এক অভিনেত্রীকেও। তারা দুজন পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
অভিনেত্রী আফরিনের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে রহমতউল্যাহ ৮ জুলাই রাত সাড়ে আটটায় পরিদর্শক মামুনকে বনানী মডেল টাউন এলাকার একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। চক্রটির লক্ষ্য ছিল রহমত উল্লাহকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা। কিন্তু মামুন সেখানে থাকায় তাঁদের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটে। ওই ফ্ল্যাটেই খুন হন মামুন।
এর পর ৯ জুলাই সারা দিন লাশ নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে ঘাতকচক্র, কোথায় লাশ গুম করা যায়। হত্যার পর লাশ গুমের কাজে চক্রটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন মামুনের বন্ধু রহমত উল্লাহ। রহমতের গাড়িতে করেই বস্তায় ভরে মামুনের লাশ গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলায় একটি বাঁশঝাড়ে ফেলা হয়। এরপর সাত লিটার পেট্রল ঢেলে বস্তার ওপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেন শনাক্ত করা না যায়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়নি। গত মঙ্গলবার গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার পুলিশ মামুনের পোড়া লাশ উদ্ধার করে। পরনের প্যান্ট ও কোমরের বেল্ট দেখে মামুনের পরিবারের সদস্যরা তার লাশ শনাক্ত করেন। এখন একে একে বেরিয়ে আসছে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য রহস্য।
একটি সূত্র বলছে, বিত্তবানদের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ করে দেয় ঘাতকচক্র এবং একপর্যায়ে ফাঁদ পাতে। তারা প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে আগতদের আইনের ভয়ের পাশাপাশি লোকলজ্জার ভয় দেখিয়ে বিপাকে ফেলে। এর পর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই চক্রে নায়িকাও রয়েছেন।
রহমতউল্যাহকে গতকাল আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি চৌকস দল ইতোমধ্যেই হত্যাকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এখন মুখ খুলছেন না। তবে কী কারণে মামুন ইমরান খানকে হত্যা করা হলো তা পরিষ্কার হয়নি।