মেয়েটির অনুরোধে প্রতিবেদনটিতে তার নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। সেটা ছিল আমার বিয়ের প্রথম রাত। প্রথমবার কোনো পুরুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চলেছিলাম আমি।প্রাণের বান্ধবীদের কাছ থেকে শোনা কিছু কথা আর কয়েকটা পর্নো ভিডিও দেখে আমার মনের মধ্যে প্রথম রাতের যে ছবিটা বারে বারে মনে পড়ছিল, ইচ্ছাগুলোও জেগে উঠছিল সেরকমভাবেই।
মাথা ঝুঁকিয়ে, হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে আমি যখন শোবার ঘরে প্রবেশ করলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ছবির মতোই সব কিছু চলছিল। আমি তখনও জানতাম না যে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সেই স্বপ্নগুলো ভেঙে যাবে।
প্রথম রাতের স্বপ্নে এরকমটা হওয়ার ছিল-আমি ঘরে আসার পরে স্বামী আমাকে জড়িয়ে ধরবে, চুম্বনের স্রোতে ভাসিয়ে দেবে, আর সারা রাত ধরে আমাকে ভালবাসবে।
কিন্তু বাস্তব যে ছবিটা দেখলাম তা হলো, আমি ঘরে ঢোকার আগেই আমার স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওই মুহূর্তে মনে হলো আমার অস্তিত্বটাই যেন আমার স্বামী সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করলেন। আমার বয়স সেই সময়ে ছিল ৩৫। আমি কৌমার্য হারাইনি তখনও।’
স্বপ্নভঙ্গ
কলেজে পড়ার সময়ে, বা তার পরে যখন চাকরি করি, তখনও দেখতাম আমারই কাছের কোনো ছেলে আর মেয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। তারা একে অন্যের হাত ধরে, বা কাঁধে মাথা রেখে ঘুরে বেড়াতো। আমি মনে মনে ভাবতাম, আহা, যদি আমারও এরকম কোনও সুযোগ আসতো। আমারও তো ইচ্ছা হতো ওইভাবে কারও ঘনিষ্ঠ হতে!
আমাদের পরিবারটা বেশ বড় ছিল- চার ভাই, এক বোন, বয়স্ক বাবা-মা। তবুও আমার সবসময়েই একা লাগতো। আমার ভাই-বোনদের সবারই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের সকলের পরিবার ছিল। কোনো সময়ে এটাও মনে হতো যে ভাই-বোনরা কি আমার জন্য একটুও চিন্তা করে? তাদের কি মনে হয় না যে আমারও বয়স হচ্ছে, তবুও আমি ততোদিনও একা?
আমারও তো প্রেম করতে ইচ্ছা করতো। একাকীত্ব গ্রাস করছিল আমাকে। কখনো কখনো মনে হতো যে আমি খুব মোটা- সেজন্যই আমার ইচ্ছাগুলো পূরণ হয় না।
কিন্তু পুরুষ মানুষ কি মোটা মেয়ে পছন্দ করে না? শুধু কি আমার ওজনের জন্য আমার পরিবার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাচ্ছে না? তাহলে কি চিরজীবন আমাকে একাই কাটাতে হবে? এই সব প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে সব সময়ে ঘুরপাক খেতো।
অতঃপর বিয়ে
শেষমেশ, আমার যখন ৩৫ বছর বয়স, তখন বছর চল্লিশেকের একজন আমাকে বিয়ে করতে এগিয়ে এলো। যখন প্রথম দেখা করি তার সঙ্গে, তখনই আমার মনের মধ্যে থাকা চিন্তাগুলো তাকে জানিয়েছিলাম।
সে কোনো কথারই জবাব দেয়নি। আমার মনে হতো আমার কথাগুলো যেন মন দিয়ে শুনছেই না। সব সময়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতো সে। কোনো কথারই জবাব দিতো না, শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিতো।
আমি ভাবতাম আজকাল মেয়েদের থেকেও অনেক বেশি লজ্জা পায় পুরুষ। আমার হবু স্বামীও বোধহয় সেরকম। তাই আমার কোনো কথারই জবাব দিচ্ছে না। কিন্তু বিয়ের পরে প্রথম রাতের ঘটনায় আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমি শুধু ভাবছিলাম সে কেন ওরকম আচরণ করল। পরের দিন সকালে আমি যখন জিজ্ঞাসা করলাম, সে জবাব দিল যে তার শরীর ভাল ছিল না। কিন্তু তার থেকে আর একটা শব্দও বার করতে পারিনি। প্রথম রাতের পরে দ্বিতীয়, তৃতীয় রাতও কেটে গেল একইভাবে।
সব গোপন করা হয়
আমি শাশুড়ির কাছে বিষয়টা জানালাম। কিন্তু তিনিও ছেলের পক্ষ নিয়ে বলতে লাগলেন। ‘ও লজ্জা পাচ্ছে। ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে ও। ছেলেদের স্কুলে পড়াশোনা করেছে তো, সেই জন্য। ওর কোনো দিদি বা বোন নেই, কোনো মেয়ে বন্ধুও নেই। সেজন্যই এরকম আচরণ।’
সাময়িক স্বস্তি পেয়েছিলাম কথাটা শুনে। কিন্তু ব্যাপারটা আমার মাথা থেকে কিছুতেই গেল না। ওদিকে আমার সব ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এক এক করে ভেঙে যাচ্ছিল।