জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিরোধ

জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিরোধ- অনেক মানুষই জন্ডিসকে রোগ বলে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গ মাত্র। ফরাসি jaune শব্দ থেকে Jaundice নাম করণ করা হয়েছে।

ফরাসি ভাষায় শব্দটির অর্থ হলো হলুদ। এই রোগে আক্রান্ত হলে চামড়া ও চোখ হলুদ দেখায় কারণ শরীরে বিলুরুবিন নামে হলুদ রঙ এর পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

মানব দেহে বিলুরুবিনের স্বাভাবিক পরিমাণ ১ হতে ১.৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। রক্তে এই উপাদানের মাত্রা এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে তা বোঝা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে চামড়া পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে দেখা যায় বলে জন্ডিসকে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত।

লক্ষণ

প্রধান লক্ষণ হল চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। সমস্যা বেশি হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদবর্ণ ধারণ করতে পারে। অনেক সময় পায়খানা সাদা হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা যায়। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি তো আছেই।

প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক

“পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করাই জন্ডিসের আক্রমণ থেকে বাঁচার মূলমন্ত্র। রাস্তাঘাটে পানি, ফলের জুস, সরবত ইত্যাদি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। সময়মত হেপাটাইটিস এ এবং বি’র টিকা নিতে হবে।” পরামর্শ দিলেন এই চিকিৎসক।

তিনি আরও জানান, হেপাটাইটিস বি’র ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি, দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয়মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয়।

হেপাটাইটিস এ’র ক্ষেত্রে একটি ডোজই যথেষ্ট। আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পরপর বুস্টার টিকা দেওয়া হয়।

প্রতিটি টিকার দাম বেসরকারীভাবে সাধারণত ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হয়ে থাকে।

তবে জন্ডিস হলে টিকা নিয়ে কোনো লাভ হয় না। তাই সুস্থ থাকতে আগেই টিকা নিতে হবে।

জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে ডা. হাসান বলেন, “যেহেতু জন্ডিস কোনো রোগ নয়, তাই এর কোনো ওষুধ নেই। সাত থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “জন্ডিস হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। যকৃতের প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। প্রচুর শর্করাজাতীয় ও ভিটামিন-সিযুক্ত খাবার খেতে হবে। গ্লুকোজ, আখের রস, আনারস ইত্যাদি জন্ডিস রোগীর জন্য উপকারী।”

“জন্ডিস হলে প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন বা ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। পরিপাকতন্ত্রে জমে থাকা জীবাণুগুলো যাতে প্রদাহ তৈরি করতে না পারে সে জন্য রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার হলেও পায়খানা করা নিশ্চিত করতে হবে।” বললেন তিনি।

ডা. কামরুল হাসান পরামর্শ দিতে গিয়ে আরও জানান, জন্ডিস কোনো রোগ নয় বলে একে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। জন্ডিসের চিকিৎসা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কেউ ঝাড়ফুঁক করে জন্ডিস নামায়, রোগীকে অতিরিক্ত হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়ান, কেউ আবার বিভিন্ন গাছের শেকড় খান। এগুলো সম্পুর্ণ ভুল ধারণা। জন্ডিস হলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।