ঘরে ফিরেই মা দেখল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেয়ে ইনহাসের বিছানা!

আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানাধীন ল্যান্ডমার্ক আবাসিক এলাকার লায়লা ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে ইনহাস বিনতে নাছির (১২) নামে এক কিশোরীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

ইনহাস নগরীর মেরন সান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বাবা মোহাম্মদ নাছির সৌদি প্রবাসী। ঘটনাস্থল লায়লা ভবনের ছয় তলা লায়লা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় নাছির ও তার তিন ভাইয়ের পরিবার থাকে।

সকালে বাসায় মায়ের অনুপস্থিতিতে ইলহামকে কেও খুন করেছে বলে জানান তিনি।ইলহামের সৌদি প্রবাসী বাবা নাসির উদ্দিন সর্বশেষ বিদেশ গেছেন গত ছয় মাস আগে। মা নাসরিন আক্তার খুশবু তিন কন্যা ও সংসার নিয়েই আছেন।

ইলহামের মা নাসরিন আক্তার খুশবু জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বড় কন্যা ইলহামকে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে দ্বিতীয় কন্যা জারিনকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গেছি। যাওয়ার সময় ঘরের দরজার ভেতর লক লাগাতে বলেছিলাম ইলহামকে।

জারিনকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার পর বাজারে গিয়ে কিছু মাছ ও কাঁচা তরকারি কিনে বাসায় ফিরতেই সৌয়া নয়টা বেজে গেছে। বাসায় এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে লক করা হয়নি। ঘরে ডুকে দেখি পুরো বাসায় সুনসান নিরবতা।

তিনি বলেন, ইলহামকে পড়ার টেবিলে থাকার কথা, কিন্তু আজ নেই। ওর কক্ষের দিকে তাকাতেই দেখি খাটের উপর শুয়ে আছে। ওর কক্ষে ডুকতেই দেখি মাথার উপর বালিশ চাপানো। এরপর বালিশটা সরাতেই দেখি ওকে গলাকেটে হত্যা করেছে।

রক্তে খাট-বিছানার চাদর ভেসে যাচ্ছে। সাথে সাথে আত্মচিৎকার দিতেই সামনের বাসা থেকে ছোটজার ভাই রিজুয়ান করিম আরজু এসে ইলহামকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

নাসরিন আক্তার খুশবু বলেন, ইলহাম সকালে কিছুই খায়নি। ঘুম থেকে তুলে দিতেই ও পড়তে বসেছে। ছোট কন্যা ইনাজ আমার কক্ষেই ঘুমিয়েছিল। আর দ্বিতীয় কন্যা জারিনকে নাস্তা খাইয়ে স্কুলে নিয়ে গেছি।

এসে ইলহামকে ভাত খাইয়ে নিয়ে স্কুলে যেতাম। কারণ ওর স্কুল সকাল দশটায়। ইলহাম চকবাজার মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর জারিন নার্সারিতে পড়ে। ইনাজের বয়স আড়াই বছর মাত্র।

খুশবু বলেন, হয়তো কেউ বাসায় ডাকাতি করতে ডুকেছে, ইলহাম চিৎকার করার কারণে খুন করেছে। বাসা থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

বাসার যে-কক্ষ থেকে স্বর্ণ লুট হয়েছে বলে খুশবু জানান, সে-কক্ষের স্টিলের আলমিরার কিছু কাপড়-চোপড় এলামেলো দেখা গেছে। আলমিরার নীচ থেকে চাবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে অলঙ্কার রাখার ছোট্ট একটা কৌটাও সেখানে দেখা যায়।

খুশবুর বড় জা জেবুন্নেছা বলেন, ইলহামের মা খুশবুর কান্না আর আত্মচিৎকার শুনে পঞ্চম তলা থেকে তিনি ছুটে আসেন। ওই সময় খুশবু ইলহামের বাবাকে কি জবাব দেবেন, এই বলে সে রান্না ঘর থেকে ছুরি নিয়ে নিজের হাতকাটার চেষ্টা করতে থাকেন।

খুশবু জানান, তাদের তিন কক্ষের বাসায় তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন তিনি। গত ঈদে সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর এখনও ফেরেননি তার শাশুড়ি। আর যে ঘরে ইলহামকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে,

তার পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল তার ছোট বোন ইনহাজ।এইা ব্যাপারে কথা বলা হয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিএমপি বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রণবের সাথে।তিনি বলেন, আমাদের ধারণা হয়তো পরিবারের আর না হয় বাহিরের কারও দ্বারা

এই খুন হয়েছে। তবে পুরোটাই পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, পারিবারিকভাবে নাকি বাহিরের কেও খুন করেছে আমরা খতিয়ে দেখছি।

এছাড়া আরও কিছু বিষয় নিয়ে আমরা এগুচ্ছি, যা তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। মেয়ের মাও আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে আছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উম্মোচন করতে পারবো।