রাজধানীর মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা ফিরোজ খান (৬২)। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। গুলশান লেকের রাস্তায় সকালে হাঁটার সময় অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল হামিদ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলাপের একপর্যায়ে তার চাকরি করার আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সম্মতি জানান। সম্মতি পেয়ে তাকে আলী নেওয়াজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির চেয়ারম্যানের পিএস আল-আমিনের একটি ভিজিটিং কার্ড দেন এবং ফোনে কথা বলিয়ে দেন। আল-আমিনের কথামতো পাসপোর্ট ও স্ট্যাম্প সাইজের তিন কপি করে ছবি এবং বায়োডাটা নিয়ে কয়েকদিন পর তাদের অফিসে যান। ওই অফিসে গেলে আল-আমিন তাকে কোম্পানির এমডি জি মোস্তফা কামালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এমডি মোস্তফা কামাল তার বায়োডাটা কোম্পানির চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করবেন জানিয়ে পরের দিন সকালে আল-আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অফিসে আসার জন্য বলেন। তিনি পরদিন আবার ওই অফিসে যান। তার বায়োডাটা দেখে তাকে অ্যাডমিন পদের জন্য মনোনীত করা হয়।
সর্বসাকুল্যে ৬০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে বলে জানান। এ সময় মিজানুর রহমান নামে একজন অনুমতি নিয়ে ওই রুমে প্রবেশ করে আল-আমিনের দূরসম্পর্কের ভাই পরিচয় দিয়ে এমডিকে বলেন, তিনি আল-আমিনের কাছে ১০ লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু আল-আমিন সেই টাকা না দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এ সময় এমডি মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চান কিসের টাকা পাবেন। মিজানুর রহমান তখন জানান, তারা তিনজন একজন ইন্ডিয়ান বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কার্ড খেলছিলেন। ওই খেলায় তারা ৩০ লাখ টাকা জেতেন। আল-আমিন এবং আরও একজন তাকে ঠকিয়ে ওই টাকা নিয়ে যান। তখন এমডি বলেন, আপনার টাকা কোম্পানির পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে। তারা নিজেরা নিজেরা যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন ফিরোজ খান চুপচাপ বসে শুনছিলেন। পরে ফিরোজ খান তার চাকরির বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি বলেন, জাপান থেকে তার কাগজপত্র সব ঠিক করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই তাকে বনানী সদর দফতরে অ্যাডমিনের দায়িত্বে নিয়োজিত করা হবে। ওই দিনই সন্ধ্যার পর সেখানে বসেই ফিরোজ খানসহ তারা সিদ্ধান্ত নেন, ইন্ডিয়ান ব্যক্তির সঙ্গে তারা ব্যবসা করবেন। ফিরোজ খান ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবেন বলে জানান। পরে তিনি তার জমি বিক্রি করা এবং পেনশনের টাকা ছাড়াও আরও কিছু টাকা ধার করে সাত লাখ ৭৫ হাজার টাকা ওই প্রজেক্টে বিনিয়োগের জন্য তাদের হাতে তুলে দেন। কয়েকদিন পরে ৫ জুন ওই অফিসের ঠিকানায় গিয়ে দেখেন সেখানে কোনো অফিসই নেই। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। ফিরোজ খান প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ওইদিনই খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। একই সঙ্গে তিনি পিবিআইর সহযোগিতা চান। ভুয়া অফিস বানিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের প্রধানসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন হারুন অর রশিদ (ছদ্ম নাম রাম নাথ ঠাকুর-৫৬), সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী (ছদ্মনাম জি মোস্তফা কামাল-৪৭), শামছুল আলম মজুমদার ওরফে কোপা শামছু (ছদ্মনাম মিজানুর রহমান-৪৮), আমিনুল ইসলাম আমিন (৩৭) ও মোকসেদুর রহমান আকন (ছদ্মনাম আল-আমিন-৩৮)। পল্লবীর ১১ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় বিলাসবহুল অফিস বানিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন তারা।
পিবিআইর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, আটক আসামিরা তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও বয়স্ক লোকদের বিদেশি সংস্থা বা প্রজেক্টে বেশি টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাজানো অফিসে নিয়ে যায়।
সেখানে ওই চক্রটি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। ফিরোজ খান ছাড়াও এ চক্রটি দক্ষিণখান থানার আজমপুর এলাকার বাসিন্দা ভিকটিম গোলাম মোস্তফার (৬০) কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকাসহ একাধিক লোকের কাছ থেকে এ চক্রটি একই কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।