সৌদি নিয়ে ওরা আমাকে চার মাসে তিনবার বেচা দিছে তারপর প্রতিদিন আমার সাথে…..

মাদারীপুরের মেয়ে শারমিন (ছদ্মনাম)। মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। ভাগ্যের কী নিষ্ঠুরতা, মর্যাদা তো দূরের কথা উল্টো পণ্যের মতো বিক্রি হয়েছেন দফায় দফায়। হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নির্যাতনের মাত্রাও। অমানবিক সেই নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন দুই সন্তানের এ জননী।

পরিবার পরিজন ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমানো, সেখানকার জীবন চিত্র, শেখদের অমানবিক নির্যাতন এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সার্বিক বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

শারমিন জানায়, স্বামী টেম্পু চালান। দুই সন্তান নিয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ৮ বছর ধরে বসবাস করেন। স্বামীর আয়ে কোনো রকমভাবে সংসার চলত। পাশের ঘরে হাফিজা নামের এক আদম ব্যবসায়ী থাকতেন। অভাবের দিন শেষ হবে এবং সুখের সংসার হবে -এমন লোভনীয় কথা শুনিয়ে আমাদের মন গলায়। বলেন, ‘সৌদি আরবে গিয়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারবি। যেতে তেমন টাকাও লাগবে না। চল্লিশ হাজার হলেই হবে।’

তিনি বলেন, সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা রাজি হই। হাফিজা আমাকে ফকিরাপুলে এক আদম ব্যাপারীর অফিসে নিয়ে গেলে পাসপোর্ট ও ছবি জমা দেই। তিন মাসের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে গত বছরের ২২ সেপ্টম্বর (২০১৭) আমাকে রিয়াদে পাঠানো হয়।

বিমানবন্দর থেকে সৌদি মালিক এসে আমাকে ওনার বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে দেখি বাংলাদেশের দু’ব্যক্তি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। একজনের নাম আলমগীর হোসেন অন্যজন সেলিম। তারা বলেন, ‘আমাকে মালিকের বাসায় দিয়ে আসবে।

ভিন দেশের ভাষা বুঝি না। কার কাছ থেকে সাহায্য চাইব। তাই বিশ্বাস করে তাদের গাড়িতে ওঠি। এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এক বাসায় নিয়ে যায়।

বাসায় গিয়ে দেখি বেশ ক’জন বাঙ্গালি বোন (নারী), তাদের জিজ্ঞেস করলাম এখানে আমার কাজ কী। তারা বলেন, ক’দিন থাকেন, পরে টের পাবেন। এরই মধ্যে জানতে পারলাম, এখানে আমাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এক শেখের কাছে। পরে আরও দুইবার বিক্রি করা হয়েছে। মাঝের ঘটনাগুলো আর বলতে চাই না।

তিনি জানান, সেখান থেকে মাস খানেক পর পালিয়ে যান তিনি। পরে আরেক বাঙ্গালি নারীর সহায়তায় দেশে দালাল হাফিজার সাথে যোগাযোগ করেন এবং দেশে ফিরে আসার মিনতি জানান।

শারমিন বলেন, পরে হাফিজার পরামর্শে দূতাবাসে যোগাযোগ করি। সেখানকার কর্মকর্তারও ভালো ব্যবহার করেননি। সেখান থেকে সফর জেল হয়ে ব্র্যাকের সহায়তায় দেশে ফিরে এসেছি। আর কোনো মা-বোনকে সৌদি আরবে যেন না পাঠায় সরকার। ওই মৃত্যুকূপ থেকে ফিরে আসা ভাগ্যের বিষয়।

সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়ে দেশে ফেরত আসার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলা হয়, সুখের আশায় বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা সৌদি গিয়ে বেতন পাচ্ছেন না, উল্টো তাদের কপালে মিলছে নির্যাতন নিপীড়ন। সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরা এসব নারী দরে সংখ্যা বাড়ছেই। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নারী দেশে ফেরত এসেছে। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার নারী ফিরেছেন এ বছরই।