পাকস্থলীর ভেতরে ইয়াবা পাচারের নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন চোরাকারবারীরা। এতদিন পাকস্থলীর ভেতরে সোনা পাচারের রেওয়াজ থাকলেও সম্প্রতি ইয়াবা পাচারের এ কৌশলে হতবাক গোয়েন্দারা। আর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুদের।
গোয়েন্দারা বলছেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এমনকি কোরআনের হাফেজ পর্যন্ত মরণ নেশা এ কারবারের অভিযোগে আটক হয়েছেন। তারা নিত্য নতুন কৌশলও ব্যবহার করেছে যা গোয়েন্দাদের নিকট ধরাও খেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পেটের ভেতর করে ইয়াবা পাচারের ঘটনায় বিস্মিত গোয়েন্দারা।
সূত্রমতে, রাজধানীতে প্রথম পেটের মধ্যে ইয়াবা পাচারের ঘটনা উদঘাটন হয় গত ৪ জুন। এ দিন দক্ষিণখানে আটক করা হয় ৪ জনকে। মো. সেলিম মোল্লা, তার ভাতিজা মো. আফছার ওরফে বাবুল (১২) এবং মাদক ব্যবসায়ী মো. মামুন শেখ, মো. শরিফুল, মো. ফাহিম সরকার ও মো. রাজিব হোসেন।
আলোচিত এ ঘটনার সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্রাচার্য বলেন, ‘ইয়াবা পাচারের সঙ্গে রোহিঙ্গা শিশুদের জড়ানো হচ্ছে। বেশি টাকার লোভে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো মাদক পাচারে তাদের শিশুদের পাঠিয়ে সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতার রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লা উখিয়ার লেদা ক্যাম্পে পরিবারসহ থাকে। ১২ বছরের আফজার তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসে রেজওয়ান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেলিমের পরিচয় হয়।
রেজওয়ানের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। ইয়াবা ব্যবসা করার জন্য সে কক্সবাজারেই বাসাভাড়া নিয়ে থাকে। ঢাকায় মামুন তার প্রধান সহযোগী। রেজওয়ান পাঁচ হাজার ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠানোর জন্য রোহিঙ্গা সেলিম মোল্লার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি করে। এরপর সেলিম তার ভাতিজা আফছারকে নিয়ে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে।
৫০ পিস করে ইয়াবা ক্যাপসুল আকারে তৈরি করে স্কচটেপ ও পলিথিনে মুড়িয়ে। এরপর ৩০টি ক্যাপসুল পানি দিয়ে আফছারকে গিলিয়ে দেয়। এছাড়া এমন ৭০টি ইয়াবা ক্যাপসুল সেলিম নিজে গিলে খায়। মোট ৫ হাজার ইয়াবা এভাবে তারা গিলে পেটে করে নিয়ে আসে ঢাকায়। আসার পথে তারা কোনোকিছু খায় না। এমনকি ওষুধ খেয়ে নেয় যাতে পায়খানা না হয়। ঢাকায় এসে তারা ফের ওষুধ খায় মলত্যাগ করার জন্য।
এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার করে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। এভাবে ক্যাপসুল (পোঁটলা) বানিয়ে ইয়াবার প্যাকেট গিলে ঢাকায় এসে টয়লেট করে তা আবার বের করে দেয় রোহিঙ্গারা।
তিনি আরও বলেন, বিকালে আফছার ও তার চাচা সেলিম উখিয়া থেকে বাসে করে ঢাকায় আসে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করে ডিবি। এরপর ইয়াবা চালান গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ মামুন ও তার সহযোগীদের আটক করা হয়।
অতিরিক্ত কমিশনার জানিয়েছেন, এর আগেও আফছার ও তার চাচা সেলিম একাধিকবার ঢাকায় একইভাবে ইয়াবা নিয়ে আসে। তারা কখনও বাসে, কখনও ট্রেনে আসে। আরও রোহিঙ্গা শিশু আছে যাদের এভাবে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে তারা জড়িয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। শিশু আফছার এই ইয়াবা চালান পৌঁছে দিতে পারলে ১০ হাজার টাকা পেত। তার চাচা সেলিম পেত ১৫ হাজার টাকা। এত কম সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে এই পথে রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের পরিবার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে দিচ্ছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস।
এদিকে সোমাবর দিবাগত রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ১ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। আটকতৃতরা হলো জসিম উদ্দিন (২২), নূরুল আফসার (২০) ও জহির উদ্দিন (৩৩)।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সাগর কলার ভিতরে ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেটের এক একটি প্যাকেট পানির মাধ্যমে গিলে পাকস্থলীতে ধারণ করে কক্সবাজার হতে বিভিন্ন পরিবহন যোগে ঢাকায় আসত। পরবর্তীতে তারা খোলা স্থানে মলত্যাগ করে পাকস্থলী থেকে উক্ত ইয়াবা ট্যাবলেট বের করত। তারপর ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রয় করত।
সার্বিক বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্রাচার্যা বলেন, মাদক চোরাকারবারীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় তাদের কৌশল ধরে ফেলেছে।
তিনি বলেন, মাদক চোরাকারবারীরা যে কৌশলই ব্যবহার কুরক না কেন তাদের কৌশল ধরে ফেলা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে যে চলমান অভিযান সেটি অব্যাহত থাকবে। কোন মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হবেনা।