খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় আবির ও টুটুল মিলে মোহাম্মদনগর মহিলা কামিল মাদরাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্রীকে (১২) ধর্ষণ করে। সেটি আবার ভিডিও করে ধর্ষণকারীরা। একপর্যায়ে ধর্ষণকারীদের স্ত্রীদের বললে উল্টো তাকে মারধর করার হুমকি ধামকি প্রদান করে। এই ক্ষোভে ৩রা জুন মেয়েটি নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বর্তমানে মেয়েটি খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ‘আমি ওই ধর্ষণকারীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই’ এমন বুকফাটা আর্তনাদ ধর্ষিতা মেয়েটির।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেয়ের বুকের ১০ শতাংশের বেশি আগুনে পুড়ে ঝলসে গেছে। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত হলেও মানসিক পরিস্থিতি তার মোটেও ভালো নেই।
এদিকে, এ ঘটনায় ধর্ষিতা মেয়ের বাবা বাদী হয়ে খুলনা সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় তিন জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. আজিজ শেখের ছেলে মো. আবির শেখ (১৫), মৃত মকবুল শেখের ছেলে টুটুল শেখ (২৮) ও আজিজ শেখের ছেলে মো. রাজু শেখ (২০)। তারা নগরীর সোনাডাঙ্গা মেইন রোডে রশিদ সরদারের ভাড়াটিয়া ছিলেন। মামলায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই দিপক কুমার পাল রোববার বেলা সাড়ে ৩টায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেফতার করেন।
খুমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মাদরাসা ছাত্রী বলেন, কয়েক মাস আগে নগরীর সোনাডাঙ্গা মেইন রোডে রশিদ সরদারের ভাড়াটিয়া আবির রাত ৮টার দিকে তাকে ভাত দেখানোর জন্য ঘরে ডাকে। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে। আর টুটুল ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর তারা তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সব করার সময় ধর্ষিতা ছাত্রী বলে, ‘আমি আপনাদের ফুফা বলে ডাকি, আমি আপনাদের মা’র মতো আমার সঙ্গে এসব খারাপ কাজ করেন না।’ কিন্তু মেয়েটির আকুতিতে তাদের মন গলেনি।পরে টুটুল ও আবির ধর্ষণের চিত্র মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওটি রাজু নিয়ে বলে, ‘তুই (মাদরাসা ছাত্রী) ওদের সঙ্গে যা করেছিস সব ভিডিও আমার কাছে আছে। এখন আমার সঙ্গে ওইসব করতে হবে, না করলে সবাইকে বলে দেবো ও ইন্টারেনেটে তোর ভিডিওটি ছেড়ে দেবো।’ বিষয়টি মাদরাসা ছাত্রী লোকজনের ভয়ে কাউকে বলতে পারতো না। নরপিশাচদের হাত থেকে বাঁচতে টুটুলের বউ পান্না ও রাজুর বউ রূপা এবং আবিরের প্রেমিক বৃষ্টিকে জানায়।
তারা এসব শুনে কাউকে না বলতে নিষেধ করে উল্টো তাকে হুমকি ধামকি দেয়। গত ৩রা জুন এ বিষয় নিয়ে জানাজানি হলে ওইদিন রাতে মাদরাসা ছাত্রী ঘরের মধ্যে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মেয়েটি বলে, ভাই যারা আমাকে মুখ বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। তারা যেন আর কারোর সর্বনাশ করতে না পারে। সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বায়জিদ আকন বলেন, ধর্ষিতার পিতা মো. আল আমিন সরদার বাদী হয়ে তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং-১৬। ধর্ষণকারীদের ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, মেয়েটির ভাষ্য মতে, কয়েক মাস আগে দুই জন লোক তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টির বিচার চাওয়ায় এক মহিলা তাকে মারপিট করেছে। এই ক্ষোভে সে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তার বুকে ১০ শতাংশের বেশি আগুনে ঝলসে গেছে। বর্তমানে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) তত্ত্বাবধানে তাদের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওই সব ধর্ষণের মামলাগুলোয় দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। আর নারীদের নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে যাতে স্বামীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটালে যাতে প্রতিবাদ করতে পারে। অনেক স্ত্রী স্বামীর ঘর ছাড়া তাদের কোনো জায়গা থাকে না বলেই স্বামীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। এ জন্য নারীদেরকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা করা ও ধর্ষণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে।