জাতীয় সংসদ ভবন রিক্সায় প্রকাশ্যেই নারীদের দেহ ব্যবস্যা আধা ঘণ্টা চরম তূপ্তি পেতে লাগে মাত্র ১০০ টাকা,

রাজধানী ঢাকার এক অনন্য স্থাপত্য জাতীয় সংসদ ভবন। অসাধারণ এক রূপ নিয়ে ভার বইছে গোটা বাংলাদেশের। তবে সংসদের প্রাণ ফিরে আসে বছরে কয়েকবার অধিবেশনের সময়। আর এই আধুনিক স্থাপত্য-নকশাকে ঘিরে অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে রাতের ভাসমান ‘পাখিদের’ অবাধ বিচরণ। রাজধানীতে প্রকাশ্যে নারীদের দেহ ব্যবস্যা চলবে আর কত দিন?

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সান্ধ্য ভ্রমণে আসা ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহাজাহান ইসলাম সংসদের সামনের ভাসমান দেহ ব্যবসা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে হচ্ছেটা কি? একদিকে প্রেমিক-প্রেমিকার দল। অন্যদিকে দেহ ব্যবসা কর্মীদের ঢল। শান্তিতে যে একটু হাঁটবো তারও কোনো উপায় নেই!’

সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে এ মাসেই যেন আরো বেড়েছে আদিম এই ব্যবসা। কিছুদিন আগেও এ কর্মীদের আনাগোনা কিছুটা কম ছিল। আর এখন সন্ধ্যা ঘনাতেই তাদের বিশাল জটলা দেখা যায় সংসদ ভবন ঘিরে। সেখানে তারা খদ্দের জোগাড় করেন নানা কায়দায়।

সিগারেটের দোকানি দুলাল সরকার বলেন, ‘মামা ঈদ আইছে তো, তাই হেরা পরিবারের সক্কলের লিগা টেকা জোগাড়ে বাইরাইছে।’

ভাসমান দেহ ব্যবসা সর্ম্পকে দুলাল সরকার জানান, ‘মামা হেগরে নিয়া রিক্সায় আধা ঘণ্টা ঘুরলেই ১০০ টেকার মতন দেওন লাগে। আবার টেকার পরিমাণ বাড়াইলে বাসা বাড়িতেও যাইবো।’

‘তয় সাবধান! একবার সুযোগ পাইলে, আপনারে ফাঁদে ফেইল্লা মোবাইল, টেকা, আর যা কিছু আছে, সব লয়া যাইবো গা’, সতর্ক করেন তিনি।

সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাত প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকে সরগরম। ভ্রমণ পিয়াসী ছাড়াও সেখানে ভিড় করেন হকার, বেকার, ভবঘুরেসহ নানান কিসিমের মানুষ-জন। আর সন্ধ্যা ঘনালে আধো আলো ছায়াতে প্রেমিক-প্রেমিকা যেন বেসামাল।

সংসদ ভবন এলাকার ফুটপাতকে কিছুটা তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, এর একপ্রান্তে খামার বাড়ি এবং অন্য প্রান্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। ঠিক মাঝখানে দেখা মেলে বেলা শেষে ঘুরতে আসা সাধারণ জনতার। আর সংসদের বেড়ার গা ঘেঁষে বসে থাকা প্রেমিক যুগল তো আছেই।

খামার বাড়ি মোড় থেকে সংসদের দিকে যাওয়ার সময় দেখা মিলবে উগ্র সাজ-পোষাকের এক দল মেয়ের। তাদের কেউ বয়সে তরুণী, আবার কেউ মাঝ বয়স পেরিয়েছে। তারাই ভাসমান দেহ পসারীনি।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সংসদ ভবনে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা। তবে এ কর্মীদের বেলায় তারা যেন অনেকটাই উদার। টহল পুলিশও তাদের দেখেও করেন না দেখার ভান। আর অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই যেন তারা যেখানে ভিড় জমান, সেখানের সড়ক বাতি থাকে বিকল, পুলিশ-আনসার থাকেন অনুপস্থিত এবং দেহজীবীদের ঘিরে জটলা করে পথচারী, রিকশা, সিএনজি চালিত অটো রিকশা, মটর সাইকেল, কখনো ব্যক্তিগত গাড়িও।

কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম অবশ্য বলেন, ‘আমরা এখানে পাঁচজন (ডিউটিতে) আছি। আর যে কয়েক ঘণ্টা আমাদের এখানে ডিউটি থাকে, আমরা চেষ্টা করি যেন পরিবেশটা ঠিক থাকে।’

টাঙ্গাইলের পল্লী থেকে আসা শাহনাজ পারভিন বলেন, ‘স্যার, আমরা কী না খাইয়া থাকবো? প্যাটের দায়ে বাইছা নিছি এই পথ। জীবনের তাগিদে এই ব্যবসা করি।’

জানা গেছে, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে সংসদ ভবন এলাকার দেহ ব্যবসা। রিকশা কিংবা সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকরাও এই সিন্ডিকেটেরই সদস্য। আর রয়েছে, ভাসমান দেহ দেয়া কর্মীদের দালাল চক্র।

একজন টহল পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সিএনজি বা রিক্সায় করে এরা কিছুদূর নিয়ে যাওয়ার পর যাত্রীদের পরণে পোষাক বাদে টাকা-পয়সা বা দামী জিনিষপত্র ছাড়া আর কিছুই থাকে না। এভাবে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে ফাঁদে ফেলে তারা।’

তার ভাষ্যমতে, পুলিশের ওপর মহল থেকে সঠিক ভাবে নির্দেশনা পেলে খুব তাড়াতাড়ি সংসদ ভবন এলাকার অরাজকতা বন্ধ করা সম্ভব।

রাস্তার বিপরীতে এমপি হোস্টেলের সামনে পুলিশ চেক পোস্টে কঠোর ভাবে নিরাপত্তা থাকলেও ঠিক তার অপরপাশে অনেকটা যেন খোলামেলাভাবেই চলছে দেহ বেচাকেনা।

এই নগর বিড়ম্বনা বন্ধে পুলিশ কি করছে, তা জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোমিন বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সামনে ঈদ তাই তাদের বিচরণ কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপে জাতীয় সংসদ এলাকা ফিরে পেতে পারে সুন্দর পরিবেশ, এমনটাই মনে করেন সেখানের নিয়মিত ভ্রমণ পিয়াসী ও পথচারীরা। পাশাপাশি চাই, এ কর্মীদের পুনর্বাসনে যথাযথ উদ্যোগ।