নিজের বাবার ফাঁসি চায় ছেলে, কিন্তু কেন? কারণ জানলে আঁতকে উঠবেন

আমাদের আশে পাশে প্রতিদিনই ঘটে কোন না কোন অদ্ভুত বা আশ্চর্যকর ঘটনা। বিশেষ করে গ্রাম গঞ্জে এর বিস্তার আরও বেশি। প্রায় প্রতিদিনই কথাও না কোথাও কোন ঘটনা ঘটেই থাকে। সেরকমই এক অমানুষিক ঘটনা ঘটেছে ঢাকা কামরাঙ্গীরচরে।
শামীম হাওলাদার (১৬)। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারিনি। ৫-৬ বছর অাগে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে কাপড়ের দোকানে কাজ নেয়। সেখানে কাজ শিখে দেড় বছর অাগে কামরাঙ্গীচরের রসুলপুরের রনি মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি নেয়।

সেখানে বেতন হওয়ার পর মাকে নিয়ে অাসে ঢাকায়। সাথে নিয়ে আসে ছোট তিন ভাইকেও। পরের ছোট ভাইটাও অভাবের কারণে মামার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করে সে। বাকি দুই ভাই এখনও ছোট। তারা মায়ের সঙ্গে বাসায় থাকতো।

এভাবে চলছিল তিন ভাই আর মাকে নিয়ে শামীমের জীবন। কিন্তু হঠাৎ বাবার নিষ্ঠুরতার কারণে সব কিছু তছনছ হয়ে যায়।আজ রবিবার সকাল ৭ টার দিকে কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুর এলাকায় স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করে পাষাণ্ড স্বামী সোরাব হাওলাদার।

বাবার এমন নির্মমতায় বলি হওয়া মা পিয়ারা বেগমের (৩২) সংসার জীবনের দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিল বড় ছেলে শামীম হাওলাদার (১৬)। অার্তনাদ করে বলছিল, ‘বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি বাবা অামার মাকে শুধু সন্দেহ করতো। কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখলেই মারধর করতো। এভাবেই গত দশ-বারো বছর ধরেই দেখছি মাকে শুধু মারধর করে। কারণ একটাই সন্দেহ! শুধুই সন্দেহ! অার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তুু অামরা মাকে কখনও পর পুরুষের সঙ্গে খারাপ কোনো অাচরণ করতে দেখিনি। তারপরও শুধু মারধর করতো। মায়ের কষ্ট দেখে দশ বছর বয়সে গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে অাসি। তারপর একটা দোকানে কাজ নেই। মাকেও গ্রাম থেকে নিয়ে অাসি। তারপরও মাকে প্রাণে বাঁচাতে পারলাম না পাষাণ বাবার হাত থেকে…!’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল কিন্তু চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না।

শামীম জানায়, ‘বাবার অাচরণে অামরা কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম না। মাকে নিয়ে অাসার পর সে অনেকবার এসেছিল গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তুু অামি যেতে দেইনি। গেলে তো অাবারও মাকে মারবো। এভাবেই কয়েকমাস চলে যায়। অাজকে সকালে মাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাবা অাবারও অামাদের বাসায় অাসে। তখন অামি ঘরে শুয়েছিলাম।

মা গ্রামে যাবে না বলে বাবাকে বারবার বাসা থেকে চলে যেতে বলে। এসময় বাবা মাকে বলে ‘তুইকি চাস তোর পোলারা এতিম হউক’। এটা বলে বাবা অামাদের বাসা থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর বাবা অাবারও বাসায় অাসেন। এসে মাকে বলেন লাইট বন্ধ করা জন্য। মা লাইট বন্ধ করছিল না। এসময় বাবা নিজেই লাইটটা বন্ধ করে মায়ের গলা চিপে ধরে। ঘর অন্ধকার থাকায় অামি কিছু দেখার অাগেই বাবা মায়ের গলায় ছুরি দিয়ে একটা টান দেয়। মায়ের গোঙরানির শব্দ শুনেই অামি লাফিয়ে উঠে দেখি তার গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বাবাকে ধরতে যাই। পরে এলাকার লোকজন তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’

শামীমের দাবি এখন একটাই যে বাবার নিষ্ঠুরতায় অকালে সে মা হারিয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি চায় সে। শামীম জানায়, ‘এমন বাবার আমি ফাঁসি চাই।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির বলেন, এ ঘটনায় মূল অাসামি সোরাব হাওলাদার থানায় অাটক অাছে। অার স্ত্রীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকের মর্গে পাঠানো হয়েছে।