আওয়ামিলীগ এমপির বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ নেতাসহ সাত মাদক ব্যবসায়ী আটক অতঃপর যা কান্ড ঘটালো পুলিশ জানলে অবাক হবেন

এমপির বাড়ি থেকে- নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির মালিকানাধীন বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ নেতাসহ সাত মাদক কারবারিকে আটক করেছে পুলিশ। পরে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কালিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। মাদকের বিষয়টি গোপন রেখে ‘সাধারণ জুয়াড়ি’ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সামান্য জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন অপরাধীরা।

এদিকে কালিয়া থানার ওসি শেখ শমসের আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পুলিশ আটকদের কাছ থেকে কোনো মাদক উদ্ধার করেনি। বিধায় জুয়াড়ি হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে, কালিয়া থানার ওসি শেখ শমসের আলী কালিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম খানের মধ্যস্থতায় সাত লাখ টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি রফাদফা করেছেন। যদিও তারা দু’জনই এটি অস্বীকার করেছেন।

জানা যায়, বুধবার রাতে এমপি মুক্তির কালিয়া ডাকবাংলোসংলগ্ন বাড়িতে কালিয়া শহীদ আবদুস সালাম ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বড় কালিয়া গ্রামের শেখর চক্রবর্তীর ছেলে পার্থ চক্রবর্তীসহ (২৫) ছয় মাদক ব্যবসায়ীর মিলন মেলা হচ্ছে- এমন খবর পায় পুলিশ।

রাত ১১টার পর কালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুস সবুরের নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে অভিযানে যায়। অভিযানে ইয়াবা ও গাঁজাভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করে।

মাদকের প্রকৃত পরিমাণ আড়াল করে এসআই আবদুস সবুর তৎক্ষণাৎ সাংবাদিকদের জানান, ‘আটকদের কাছে থেকে ১২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, প্রায় ৩০ গ্রাম গাঁজা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’ পুলিশের এই তথ্যের একটি অডিও রেকর্ডিং যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত আছে।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পূর্বেই এমপি মুক্তির ঘনিষ্ঠ সহযোগী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম খান ও কালিয়া থানার ওসি শেখ শমসের আলী মিলে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করেন।

পরে কালিয়া থানার পুলিশ মাদকের মামলা না করে কঠোর গোপনীয়তায় বৃহস্পতিবার (৭ জুন) বিকালে আটকদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করে মুক্তি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কালিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএম ইমদাদুল হক টুলু যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত দাবি করছি।’

একই প্রসঙ্গে শুক্রবার বিকালে কালিয়া ডাকবাংলো চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক ইফতার মাহফিলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুদ্দিন খান নিলু বলেন, ‘এমপি মুক্তির বাড়ি থেকে হাতেনাতে মাদকসহ আটক ছাত্রলীগ নেতা পার্থসহ সাতজনের বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধকে আড়াল করে টাকার বিনিময়ে ‘মাদকের’ পরিবর্তে ‘জুয়াড়ি’ বানিয়ে কৌশলে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

ওই আলোচনা সভায় এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও সাবেক কালিয়া পৌরমেয়র মুক্তিযোদ্ধা বিএম ইকরামুল হক টুকু, সালামাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান এফএম শামীম আহম্মেদ প্রমুখ।

এ ব্যাপারে কালিয়ার ইউএনও মো, নাজমুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে জুয়া আইনে প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’

নড়াইল পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কালিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।