ডাক্তার যখন অস্ত্র ব্যবসায়ী থেকে কন্ট্রাক্ট কিলার

মো. জাহিদুল আলম কাদির পেশায় চিকিৎসক। তবে মহৎ এ পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল তার অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা। আর এ ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন স্ত্রী মাসুমা আক্তার। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন বলেন, ‘জাহিদুল আলম ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তবে তিনি সরকারি বা স্থায়ী কোনো চাকরি করতেন না। তিনি গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করতেন। মূলত তিনি চিকিৎসা পেশার অন্তরালে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রি করতেন। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতে বিশেষভাবে পারদর্শী। জাহিদুল আলমের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী এবং পেশাদার খুনিদের সখ্যতা ছিল। এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে সিলেট অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলেন জাহিদুল।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জাহিদুল ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে পাস করে। এরপর সে কোনও সরকারি চাকরির চেষ্টা না করে ১ মাস দুই মাস করে মফস্বলের ক্লিনিকে কাজ করে এবং পাশাপাশি অস্ত্রের সংগ্রহ ও বেচাকেনা করতো।

এর আগে, গত ১৫ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে জাহিদুল আলমকে দুটি পিস্তল এবং ৮টি গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অস্ত্র আইনে করা মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ জুন গাবতলী এলাকা থেকে তাঁর স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে একটি বিদেশি পিস্তল ও চারটি গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। মাসুমা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় তাঁর স্বামীর কাছে আরও অবৈধ বিদেশি অস্ত্র আছে। এরপর জাহিদুলকে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হয়।

তাঁর কাছে থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) ভোর চারটার দিকে ময়মনসিংহ জেলার বাঘমারা এলাকায় তাঁর ফ্ল্যাট থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬১০টি গুলি উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি বাসায় বিশেষভাবে তৈরিকৃত একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে লুকানো ছিল।

উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে .২২ বোরের রাইফেল ৩টি, .৩০৩ রাইফেল-১টি, .৩২ বোর রিভলবার ৪টি, .২২ রিভলবার ১টি, ৭.৬৫ পিস্তল ৫টি ও .২৫ পিস্তল ১টি। উদ্ধারকৃত গুলির মধ্যে .৩০৩ রাইফেলের ১১০টি, .২২ রাইফেলের ১১০০টি, .৩২ রিভলবারের ৩৫৮টি ও .২৫ পিস্তলের ৫৪টি।