বিশ্বকাপের প্রীতি ম্যাচে বেলজিয়ামের বিপক্ষে মাঠে নামতে পারনেনি মিসরের মোহাম্মদ সালাহ। আর তিনি না থাকলে কী হয়, তাও দেখলো ফুটবলবিশ্ব। মিসরীয় দলের পোস্টার বয়, ইংলিশ প্রিমিয়র লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা চোটের কারণে মাঠের বাইরে রয়েছেন। আর তার অনুপিস্থিতিতে অসহায় মিসরকে ৩ গোলে হারালো বেলজিয়াম। রোমেলু লুকাকু, ইডেন হ্যাজার্ড এবং ফেলাইনি একটি করে গোল করেছেন। এর আগে প্রথম প্রস্ততি ম্যাচে পর্তুগালের সাথে গোলশূন্য অবস্থায় ড্র করেছিল বেলজিয়াম।
লুকাকুদের সাথে ম্যাচের আগে কুয়েতের সাথেও ১-১ ড্র করেছিল মিসরের ফুটবল দল। বুধবার রাতের ম্যাচটিতে প্রথম থেকেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছিল বেলজিয়াম।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার লুকাকু প্রথমার্ধের ২৭ মিনিটেই আকাঙ্ক্ষিত গোল এনে দেন বেলজিয়ামকে। যদিও প্রথমার্ধেয় হ্যাজার্ডের এক নিশ্চিত শট মিসরের গোলরক্ষক আটকে দেন।
৩৮ মিনিটে বেলজিয়ামেয় হয়ে গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চেলসি তারকা হ্যাজার্ড। বাঁ-দিক থেকে ডি-বক্সে ঢোকা মিডফিল্ডার ইয়ানিক কারাসকোর পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলটি করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধেও মাঠে নিজেদের উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয় বেলজিয়াম। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরনোর পর রেফারির দেয়া অতিরিক্ত মিনিটে বেলজিয়ামের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন ফেলাইনি।
আগামী ১৫ জুন সালাহকে ছাড়াই উরুগুয়ের বিরুদ্ধে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেলতে নামবে মিসর। হয়ত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেও মিসরের স্কোয়াডে ফিরতে পারবেন না ‘মিসরিয় মেসি’।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে প্রথমার্ধে ব়্যামোসের কড়া ট্যাকেলে গুরুতর চোট পান সালাহ। প্রথমে ধরে নেয়া হয় তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেছে। ব্রিটিশ দৈনিকে লিখেও দেয়া হয় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছেন সালাহ। সের উঠতে কমপক্ষে ১০ সপ্তাহ লাগবে। পরে অবশ্য ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা গেছে, কাঁধের লিগামেন্টে গুরুতর চোট পেয়েছেন সালাহ। ফলে বিশ্বকাপে তার খেলা নিয়ে আশা দেখতে পায় বিশ্ব। শুরুর দিকে না থাকলেও সুস্থ হয়ে মাঝপথে বিশ্বকাপের মাঠ মাতাতে নামতে পারবেন সালাহ। এবং সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার রাশিয়া বিশ্বকাপে মিসরের ফাইনাল স্কোয়াডে নাম উঠেছে মোহাম্মদ সালাহর।
মিসরীয়দের আশার আলো প্রায় নিভেই গিয়েছিল শনিবার রাতে। কিন্তু তা আবার নিভু নিভু জ্বলছে। কারণ একটাই মোহাম্মদ সালাহ। সার্জিও রামোসের ‘আক্রমণে’ ঘাড়ে গুরুতর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। যাওয়ার আগে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন। তার সাথে চোখের জল ঝরে অনেক ভক্তের। পরে জানা যায়, গুরুতর চোটের কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। এই খবরে ভেঙে পড়ে সারাবিশ্বের সালাহ ভক্তরা। আর মিসরীয়রা তো শোকে ভাষাই হারিয়ে ফেলেছেন কিছু বলার। অবশেষে আশার আলো জ্বালিয়েছেন দেশটির কর্তৃপক্ষ। বলেছে, বিশ্বকাপে সালাহ ম্যাজিক দেখবে বিশ্ব।
চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর বিশ্বকাপে সালাহ মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ম্যাচ শেষে লিভারপুলের ম্যানেজার ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেছেন, ‘তার ইনজুরি খুবই মারাত্মক। খুবই মারাত্মক।’
তবে হাল ছেড়ে দেয়নি মিসর। তারা সালাহকে নিয়ে আশাবাদী। জানিয়েছে, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই চোট থেকে সেরে উঠবেন এবং তাদের হয়ে মাঠ কাঁপাবেন।
রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সার্জিও রামোস খেলার ২৬ মিনিটের মাথায় সালাহকে টেনে মাটিতে ফেলে দিলে কাঁধে মারাত্মক চোট পান। প্রথমে মাঠেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আর পারেননি। পরে তিনি ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাঠের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। এসময় কাঁদছিলেন তিনি।
ম্যাচের ভাগ্য তখন প্রায় নির্ধারণ হয়ে যায়। ফাইনালে লিভারপুল ৩-১ গোলে হেরে যায় মাদ্রিদের কাছে। পরপর তিনবার শিরোপা জিতে হ্যাট্রিকের গৌরব অর্জন করে রিয়াল।
লিভারপুল বস ক্লপ জানিয়েছেন, “সালাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক্স-রে করে দেখার জন্যে। আঘাতটা হয় তার কলারবোনে কিম্বা তার কাঁধে। তবে দেখে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না।”
তবে মিসরের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টুইট করে জানিয়েছে যে সালাহর এক্স-রে করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, তার কাঁধের লিগামেন্ট মচকে গেছে।
মিসরের ফুটবল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, রাশিয়ায় বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সালাহ এই চোট থেকে সেরে উঠবেন।
আগামী ১৪ জুন থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল।
এই মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে মোহাম্মদ সালাহ ৪৪টি গোল করেছেন।
২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ডে গত জুন মাসে রোমা থেকে চলে আসেন লিভারপুলে। প্রথম মৌসুমেই তিনি লিভারপুলসহ সবাইকে মাত করে দিয়েছেন।
প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ গোলদাতা তিনি। করেছেন ৩২টি গোল। আর লিভারপুল পয়েন্ট তালিকায় উঠে এসেছে চার নম্বরে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সালাহ যতক্ষণ কিয়েভের মাঠে ছিলেন, রিয়াল মাদ্রিদের গোল পোস্ট লক্ষ্য করে লিভারপুল নয়টি শট খেলেছে কিন্তু তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়ার পর প্রথমার্ধে আর কোনো শট নিতে পারেনি।
এদিকে মিসরীয় ফুটবল সাংবাদিক মারওয়ান আহমেদ লিখেছেন, তিনি মনে করেন আসলেই এটি একটি বিপর্যয়কর ঘটনা। এটা ব্যাখ্যা করার মতো কোনো ভাষা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি লিখেছেন, “সালাহ যখন মাটিতে পড়ে গেল তখন মিসরে কয়েক মিনিটের জন্যে নিরবতা নেমে এসেছিল। পরেরবার যখন সে মাঠে বসে পড়লো তখন আমরা বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা খুব একটা সুবিধার নয়। তাকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে।
তিনি বলেছেন, মিসরের কোনো মানুষই এরকম একটা দৃশ্য দেখতে চায়নি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এর আগে আমরা আর কোনো মিসরীয়কে খেলতে দেখিনি। মিসরীয়দের তখন কেমন লাগছিল সেটা লেখার জন্যে আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকে তো কাঁদতেই লাগলো।
তবে তিনি আশা করছেন, চোট থেকে সেরে উঠবেন সালাহ। এবং বিশ্বকাপ খেলবেন।
“মিসরের ইতিহাসে তিনি একজন সেরা ফুটবলার। গত ২৮ বছর ধরে আমরা বিশ্বকাপ খেলতে পারিনি। এতো কাছাকাছি পৌঁছে এখন আমরা দেখতে চাই না যে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাক,” লিখেছেন মিসরের এই ফুটবল সাংবাদিক। (২৭ মে ২০১৮, প্রকাশিত সংবাদ)
কোনো কিছুই এখন মানুষের চোখ এড়ায় না। কিন্তু চোখ তো প্রমাণ রাখতে পারে না, যা পারে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায়বন্দি হলো, রামোসের কুৎসিত হাসি। মোহাম্মদ সালাহ যখন ঘাড়ের যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন কুৎসিতভাবে হাসছিলেন তিনি। সেই হাসি বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। আর এখন দেখেছে সারাবিশ্ব।
সালাহকে মাঠে ফেলে দেয়ার পর হাত সরিয়ে নেন সার্জিও রামোস। রেফারিকে বলেন, তিনি নির্দোষ। তা-ই মেনে নেন রেফারি।
ফিজিও এসে সালাহকে দেখে মাঠের বাইরে নিয়ে যান, তখন ক্যামেরা তাক করা ছিল রামোসের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া নেয়ার চেষ্টা। তা পেয়েও যান ক্যামেরাম্যান। সালাহকে মাঠ ছাড়তে দেখে কুৎসিতভাবে হাসতে থাকেন রামোস।
এই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ফুটবলবিশ্ব ধিক্কার দিচ্ছে এই রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়কে। তাকে ভিলেন বলে সম্বোধন করা হচ্ছে।
গ্যালারি শুদ্ধ মানুষ যখন সালাহর জন্য কাঁদছেন, তখন স্বস্তির হাসি হাসছিলেন রামোস। যেন পথের কাটা দুর করে তৃপ্ত তিনি।
টুইটারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একজন সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সালাহ যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, শয়তানের মতো হাসছিলেন রামোস।’
আরেকজন টুইট করেছেন, ‘রামোস দেখতে তখন জঘন্য লাগছিল।’
ক্ষুদ্ধ আরেকজন বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারছি না রামোস কীভাবে এমন একটা কাজ করলেন?’
রামোসকে ধিক্কার জানিয়ে একজন লিখেছেন, ‘বাজে কাজ করেছেন রামোস। সে ভয়ঙ্কর একজন খেলোয়াড়।’