দেশে করো’নাভাই’রাস (কো’ভিড-১৯) চিকিৎসায় বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে একদমই সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রোগীদের একটি ইনজেকশন প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা রোগীর শরীর ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।কিন্তু ওষুধটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। ওষুধটি পাওয়া যাচ্ছে না দ্রুত।
রোগীদের শরীরে যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় সেটি টসিলিজুমাব গ্রুপের একটি ইনজেকশন ‘একটেমরা’।এই ওষুধের উৎপাদক সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত রোশ কোম্পানি। বাংলাদেশে এই ওষুধের আমদানিকারক এবং পরিবেশক রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসোর্টিয়াম।বৈ’শ্বিক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা ওষুধটি বেশী আম’দানি করতে পারছে না।
টসিলিজুমাব ওষুধটি মূলত আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগের ওষুধ।কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক’রোনা আ’ক্রা’ন্ত গুরুতর রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রে জীবন রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করছে টসিলিজুমাব ওষুধটি। করো’না সং’ক্র’মণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এপ্রিল থেকে টসিলিজুমাব ওষুধটির প্রচুর চাহিদা বেড়েছে দেশে।কিন্তু ওষুধটি বিদেশ থেকে আমদানি করার ফলে সংকট তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, সপ্তাহে ৩-৪ দিন পরপর সুইজারল্যান্ড থেকে ওষুধটি বাংলাদেশে আসে। প্রতি চালানে ২০০-২৫০ ভায়েল ওষুধ আসে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তিনগুণ চাহিদা তৈরি হয়েছে।ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কো’ভিড-১৯ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের কনসালট্যান্ট সাজ্জাদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে,
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে অনেকের ফুসফুসের ভেতরে একটা বড় ধরনের ঝড় তৈরি হয়। সেটি ঠেকানোর জন্য এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যাদের ফুসফুস ৬০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এটা একটা সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট। এটা দিলেই যে ভালো হয়ে যাবে তা নয়।
সাজ্জাদ হোসেনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এবারের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অনেকের ফুসফুস চার থেকে পাঁচদিনের মধ্যে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এই ওষুধের কিছু গুরুতর পা’র্শ্বপ্র’তিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নয়। এটার পার্সেন্টেজ (শতাংশ) খুব কম। রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
এদিকে রোশ বাংলাদেশের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলায় বলা হয়, কো’ভিড-১৯ ম’হামা’রির সময় বিশ্বজুড়ে টসিলিজুমাব ওষুধটির চাহিদা বেড়েছে।একটেমরা ওষুধটি কো’ভিড১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথম ব্যবহার করা হয় চীনে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। এরপর আরও কিছু দেশ একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে।
করো’না ম’হামা’রির কারণে বিশ্বজুড়ে একদিকে এই ওষুধের চাহিদা তৈরি হয়েছে অন্যদিকে উৎপাদন সীমাবদ্ধতার কারণে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে।এ কারণ বায়োটেক ওষুধের উৎপাদন, বিতরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজ। সেজন্য এই ওষুধের সংকট তৈরি হয়েছে।তারপরেও এই সংকটের সময় ওষুধটির সর্বোচ্চ সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানায় রোশ বাংলাদেশ।
সৌরভ সাহা নামের এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটি জানায়, ওই ব্যক্তির বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল।চিকিৎসকরা তার বাবার শরীরে একটেমরা প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাকে সেটি সংগ্রহ করতে বলা হয়।টানা তিন দিন অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাচ্ছিলেন না।
এই ওষুধের আমদানিকারক এবং পরিবেশন রেডিয়েন্টের বিক্রয়কেন্দ্রে যান। সেখানে দেখেন দীর্ঘ লাইন। বহু মানুষ অপেক্ষা করছিল এটি কেনার জন্য।কিন্তু তাদের ওষুধ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বিদেশ থেকে আসতেও সময় লাগছিল।শেষ পর্যন্ত এ থেকে এটি ক্রয় করতে সক্ষম হন তিনি।
এ জন্য তাকে ৬০০ গ্রামের একটি ভায়েল ক্রয় করতে হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকায়।তার বাবার শরীরে প্রয়োগের পর শরীর কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল।এ জন্য দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু রেডিয়েন্টে সেটা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরমধ্যে তার বাবা মা’রা যান। চিকিৎসকরা বলেন, দ্বিতীয় ডোজটি প্রয়োগ করতে পারলে হয়তো এই রোগীর অবস্থা ভিন্ন হতে পারত।