কোলন বা কোলোরেকটাল ক্যান্সার শুধু বয়স্কদেরই যে হয়, তা কিন্তু নয়। কমবয়সীদের মধ্যেও এ ক্যান্সারের আশঙ্কা রয়েছে। অনিয়মিত জীবন-যাপনের কারণেই এ রোগটি শরীরে বাসা বাঁধে।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়াও স্থূলতাসহ পারিবারের কারও এ সমস্যা থাকলেও হতে পারে কোলন ক্যান্সার।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জার্নালে ২০১২ সালে প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মলত্যাগের জন্য হাই কমোড ব্যবহারেও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তেহরানের ১০০ জন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
যদিও কোলন ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। তবে কোলন ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে পেট ব্যথা অন্যতম। তাই নারীরা মাসিকের ব্যথা মনে করেন। যা তাদের জন্য মারাত্মক আকার নেয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ-
>> নিয়মিত ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে হয়
>> মলদ্বার থেকে রক্তপাত
>> রক্তাক্ত বা কালো মল
>> পেটে ব্যথা
>> ওজন কমে যায়
>> দুর্বলতা ও ক্লান্তি
>> পেট সবসময় ভরা লাগে
গুরুতর লক্ষণসমূহ
>> লিম্ফ নোডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে
>> লিভারের মতো শরীরে অন্যান্য অঙ্গেও ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে
>> কোলনে ও অন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করে
নারীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার নির্ণয়ের বয়স হলো ৭২ আর পুরুষষদের ক্ষেত্রে ৬৮ বছর। এর আগেও অনেকেরই হয়ে থাকে কোলন ক্যান্সার। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৫৫ বছরেরও কম বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের হার বেড়েছে ২ শতাংশ।
বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৪ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৯.২ ভাগ পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন-
উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার পরপরই ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। যদি কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণ থাকে; তবে তা পরীক্ষা করা উচিত।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, নারীদের ৪৫ বছর বয়স থেকেই কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন। যাদের পরিবারে কোলন ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে; তাদের জন্য খুবই দরকারি এ স্ক্রিনিং।
স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ডাক্তাররা কোলন ক্যান্সার হয়েছে কি-না তা শনাক্ত করতে পারবেন। কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রায়শই পলিপ নামক কোলনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।
মল পরীক্ষা বা কোলনোস্কপির মতো স্ক্রিনিং টেস্টগুলো ক্যান্সার হওয়ার আগেই পলিপগুলো খুঁজে পেতে পারেন চিকিৎসকরা। প্রাথমিক অবস্থায় তা শনাক্ত করলে কোলনে ক্যান্সার শরীরে বাসা বাঁধার আগেই ধ্বংস করা যায়।
যেসব কারণে কোলন ক্যান্সার হয়-
এমন অনেকগুলো কারণ রয়েছে; যা কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে-
>> অতিরিক্ত ওজন
>> নিয়মিত শরীরচর্চা না করা
>> লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া
>> শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকায
>> ধূমপান
>> অ্যালকোহল ব্যবহার
>> লঞ্চ সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীরা এন্ডোমেট্রিয়ামে (জরায়ুর আস্তরণ) ক্যান্সারের জন্য খুব উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।