চুইঝাল বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত মশলা জাতীয় ফসল। চুইঝালের গাছ দেখতে অনেকটা পান গোছের মতো। চুইঝাল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় প্রজাতি। এটি গোটা ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য উষ্ণ এলাকাসহ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর ও শ্রীলংকায় ও বাংলাদেশে জন্মে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল এসব জেলার চাষিদের কাছে এটি একটি অর্থকরী সমাদৃত মশলা। ভোজনরসিকদের কাছে চুইঝালের হাঁসের মাংস কদর সবচেয়ে বেশি।
মশলা হিসেবে মাংসের সাথে রান্না করা হয় যা খেতে খুবই সুস্বাদু। অনেক গুণাগুণ সম্পন্ন। গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খাবারের রুচি বাড়াতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুইঝাল অনেক উপকারী স্নায়ুবিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমন করে। ঘুমের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে এবং শরীরের ব্যথা সারায়। সদ্য প্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে ম্যাজিকের মতো সাহায্য করে। কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করে। এক ইঞ্চি পরিমাণ চুই লতার সাথে আদা পিষে খেলে সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই শীতে অতিথি আপ্যায়নে কিংবা অনুষ্ঠানে চুইঝালের হাঁসের মাংসের জুড়ি নেই।
উপকরণ
হাঁসের মাংস: ১.১/২ কেজি
চুঁইঝাল: ১০০ গ্রাম
নারিকেলের দুধ: ৩ কাপ
পেঁয়াজ বাটা: ৩ টেবিল চামচ
রসুন বাটা: ১ চা চামচ
আদা বাটা: ১ টেবিল চামচ
জিরা বাটা: ১টেবিল চামচ
ধনিয়া গুঁড়া: ১ চা চামচ
শুকনা ঝালের গুঁড়া: ১.১/২ টেবিল চামচ (স্বাদ মত)
গোলমরিচের গুঁড়া: এক চিমটি
তেল: ৩/৪ কাপ,
হলুদের গুঁড়া:১ চা চামচ
লবণ: স্বাদমতো,
আলু: ৩-৪টি (পছন্দ অনুযায়ী)
তেজপাতা+দারচিনি+এলাচ: ২টি করে প্রতিটি
ভাজা জিরার গুঁড়া: ১/৪ চা চামচ
ভাজা গরম মশলার গুঁড়া: ১/৪ চা চামচ
নারিকেল বাটা: ১ টেবিল চামচ
প্রণালী
হাঁসের পশম ভালোভাবে পরিষ্কার করে মাংস ধুয়ে পানি ঝড়িয়ে রাখতে হবে। তেল গরম করে তারমধ্যে প্রতিটি আলু চার টুকরা করে কেটে নিয়ে এক চিমটি লবন ও হলুদ দিয়ে ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখতে হবে। এবার ঐ তেলের মধ্যে ভাজা জিরা এবং ভাজা গরম মসলার গুঁড়া বাদে একে একে করে সব বাটা ও গুঁড়া মশলা এবং গরম মশলা দিয়ে অল্প অল্প পানি মিশিয়ে ভুনা করতে হবে। মশলা দিয়ে যখন সুন্দর একটা ভাজা ভাজা ঘ্রাণ বের হবে তখন এরমধ্যে হাঁসের মাংস দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নারিকেলের দুধ দিয়ে দিতে হবে। মাংস যখন আধা সেদ্ধ হবে তখন এরমধ্যে আলু আর চুইঝাল দিতে হবে। যখন দেখবেন ঝোলের পানি টেনে গেছে কিন্তু মাংস সেদ্ধ হয়নি তাহলে একটু গরম পানি দিতে হবে। সবশেষে লবণ চেখে নিয়ে মাংসের উপরে ভাজা জিরার গুঁড়া ও ভাঁজা গরম মসলার গুঁড়া ছড়িয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। চুইঝালের হাঁসের মাংস রুটি-পরোটা, চালের রুটি, কিংবা ভাত বা পোলাও-খিচুড়ির সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।