রিফাত হত্যায় এমপি পুত্র সুনাম দেবনাথকে নিয়ে বেড়িয়ে আসছে একের পর এক চ্যাঞ্চলকর সব তথ্য!

বরগুনা: রগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তি জবানবন্দি নেয়াকে একটি মহলের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। তাদের কারণেই খুনের ১৯ দিন পরে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি করা হয়েছে। মিন্নিকে নির্যাতন ও জোর-জবরদস্তি করে রিমান্ড শেষ হওয়ার দুই দিন আগেই তড়িঘড়ি করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে।

শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে এমন সব অভিযোগ করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

এ সময় নিজের মেয়েকে নিরপরাধ দাবি করে তাকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট দাবি জানান তিনি। এর আগে গত শুক্রবার বরগুনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার স্বামী কলেজছাত্র রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে জবানবন্দি দেন।

তিনি বলেন, আসামিদের শনাক্ত করার কথা বলে মঙ্গলবার সকালে মিন্নিকে বাসা থেকে ডেকে নেয় পুলিশ। তাকে ১২ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ওকে আটকে রেখে নির্যাতনের পর ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর-জবরদস্তিমূলক শেখানো জবানবন্দি রেখেছে।

কিশোর আরো বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। শুক্রবার রাতে একজন দারোগা আমার বাসায় এসে মিন্নির চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে যায়। তার পরদিনই জোর-জবরদস্তি ও নির্যাতন করে আমার মেয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। ওকে শেষ করে ফেলা হয়েছে। আমি বাঁচতে চাই না। আমি আত্মহত্যা করব।’

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। এটাই কি তার অপরাধ? সন্ত্রাসীদের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কাজ করছে। সে কারণেই ঘটনার ১৯ দিন পরে প্রধান সাক্ষী থেকে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহলটি খুনিদের আড়াল করতেই আমার মেয়েকে ফাঁসাচ্ছে। মিন্নি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তাই প্রভাবশালী মহল জানে, মিন্নিকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিলে আসামিরা সবাই খালাস পেয়ে যাবে।’

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি স্বজনহারা, আমার মেয়ে স্বামীহারা হয়েছে। কিন্তু আজকে ওরা আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছে। আমার মেয়ের জীবন বিপন্নের পথে। আমি নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অবরুদ্ধ। আমার ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমার বেঁচে থেকে কী লাভ? আমি আত্মহত্যা করব!’

স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালী মহল কারা আপনিও জানেন, এমনকি সবাই যানে। আমি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাই না। আমি অসহায়, দুর্বল। আমি চাই আমার নির্দোষ মেয়েকে নির্যাতন থেকে মুক্তি করতে।’

মিন্নির বাবা বলেন, ‘শম্ভু বাবুর আমার দিকে দৃষ্টি থাকলে নিজের স্বামীকে হত্যার অভিযোগ আমার মেয়ের কাঁধে উঠত না। তিনি চাননি বলেই আজ আমার মেয়ে প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, আমার মেয়েকে যেদিন আদালতে তোলা হয়, সেদিন তার ছেলে সুনাম দেবনাথ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, যাতে কোনো আইনজীবী আমার মেয়ের পক্ষে আদালতে না দাঁড়ায়।’ এটা থেকেই অনেক কিছু প্রমাণ পায় বলে মন্তব্য করেন কিশোর।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বরগুনা-২ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু বলেন, ‘কিশোরের মাথা ঠিক নাই, তাই পাগলামি করছে। ও আমাকে জড়িয়ে যা করছে, সেটা অন্যায় করছে। আমি আজ (শনিবার) ওর ভাই খালেকের সাথে কথা বলেছি ওকে এসব পাগলামি না করার জন্য। ওর ভাইও আমাকে বলেছে যে মেয়ে হত্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় কিশোরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’

শম্ভু বলেন, ‘রিফাত হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। তাছাড়া অভিযোগ করলেই হবে নাকি? এর তদন্ত হচ্ছে।ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকবে তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিশোর যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেসব আজগুবি গল্পের কোনো প্রমাণ? প্রমাণ ছাড়া আইনের কাছে তার এসব কথার দাম নেই। আমাদের অবস্থান খুনিদের বিপক্ষে। তাই আমরাও চাই রিফাত হত্যার বিচার।’

ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু আরো বলেন, ‘মূলত আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে, যারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গত সংসদ নির্বাচনেও ওই প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। তারাই এখন মিন্নির বাবা কিশোরকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বলাচ্ছে।’

বিষয়টি নিয়ে বরগুনা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মামলার তদন্ত করতে গেলে অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু এসব কথার কোনো ভিত্তি থাকে না। মিন্নিকে জোর-জবরদস্তি জবানবন্দি দেয়ানোর যে অভিযোগ, সেটা সত্যি নয়। মিন্নি নিজে থেকেই আদালতে রিফাত হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনায় স্ত্রীর সামনে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে প্রধান সাক্ষী ছিলেন নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। রিফাত ও রিশান ফরাজীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ জন এজাহারভুক্ত আসামি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১১ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

সোনালীনিউজ