নিষিদ্ধ ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ আসলে কী?

ঢাকা: বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করেছে আদালত। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।

পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালে দুই আঙুলের মাধ্যমে ধর্ষণ পরীক্ষা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা একটি রিট আবেদন করে।

সে প্রেক্ষাপটে সে সময় নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তথাকথিত ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ কেন আইন বহির্ভূত এবং অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।

‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ কি?
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেছেন, এই নামে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোন পরীক্ষা নেই।

কিন্তু বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুদের শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে আদালত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশে এই পরীক্ষা করাতে হয়। দেশের সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর ফরেনসিক বিভাগে এই পরীক্ষা হয়।

মাহমুদ বলছেন, হাতে গ্লাভস পড়ে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙুল প্রবেশ করিয়ে তার ‘টেন্ডারনেস’ পরীক্ষা করা হয়। এই টেস্টের নামই ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা শতভাগ নির্ভুল নয়, এবং এ নিয়ে অনেক সময় কোন উপসংহারেও পৌছানো সম্ভব হয়না।

কেন বিরোধিতা?
নারী অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন, ধর্ষণ প্রমাণে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ একটি ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘অমানবিক’ পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হবার মত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রিট দায়েরের পাঁচ বছর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট-জনের মতামত গ্রহণের পর আজ আদালত এই রায় দিল।

ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গত বছর যে হেলথ কেয়ার প্রটোকল করেছে, সেটি অনুসরণ করতে হবে।

রায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, চিকিৎসক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, এবং সরকারী কৌসুলির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত ঐ রায়ে আরও বলেছে, মামলা চলাকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাবধান হতে হবে আইনজীবীদের। নারীর প্রতি অমর্যাদাকর কোনও প্রশ্ন করা যাবেনা বলেও আদেশ দিয়েছে আদালত।

সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চিত করতে হবে যে কোনও পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানিকর কোনও প্রশ্ন না করে।

২০১৩ সালে যারা রিট আবেদন করেছিল, তাদের অন্যতম বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বিবিসি বাংলাকে তাদের সন্তোষ জানিয়ে বলেছেন, এই পরীক্ষাটি নারীর জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং অসম্মানজনক।

এ পরীক্ষার ফলে ধর্ষণের শিকার একজন নারীকে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক ও মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ কারণেরই তারা এর বিরোধিতা করে আসছিলেন।

আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবী জানান তিনি। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার একজন নারীকে কেন প্রমাণ করতে হবে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন? বরং এটা হওয়া উচিত, যে ধর্ষক তাকে প্রমাণ করতে হবে যে সে ধর্ষণ করেনি।

এখন থেকে এই আইন সংশোধনের জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন মালেকা বানু। এর আগে ২০১৫ সালে ভারতে নিষিদ্ধি হয় এই পরীক্ষা।