ভাইদের নিয়ে স্ত্রীকে পেটালেন স্বামী, ১৭ দিন যন্ত্রণা ভোগ করে হার মানলেন মীম

দীর্ঘ ১৭ দিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগের পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন মাহমুদা আক্তার মীম (২৬)।

স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান তিনি।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ওই তথ্য দিয়েছেন। ঘটনার পর থানায় মামলা হয়েছে। তবে মীমের স্বামী পিন্টু মিয়াসহ (৩২) অন্য আসামিরা এখনো পলাতক। পিন্টু মিয়া পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের দড়িসারদিয়ার গ্রামের আব্দুল মমিনের মেয়ে মাহমুদা আক্তার মীমের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে হয় একই উপজেলার রাজাইমণ্ডল গ্রামের সগির প্রামানিকের ছেলে পিন্টু মিয়ার। বিয়ের পর আব্দুল্লাহ আল মাহিন (৮) ও মুন্তাহা (৩) নামের তাদের দুটি সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের সময় দেড় লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া হলেও পিন্টু মিয়া প্রায়ই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করত।

মীমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত বছর ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও গত ১৫ মে পিন্টু আরো এক লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে মীমকে আনতে বলে। এই টাকার জন্য কয়েকদিন ধরে মীমের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছিল। এরই একপর্যায়ে গত ২১ মে রাত ২টার দিকে পিন্টু মিয়া ও তার চার ভাই এবং এক ভাগিনাকে নিয়ে মীমকে মারধর করে। একপর্যায়ে তারা গামছা দিয়ে মীমের গলায় ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। চিৎকার ও শোরগোল হওয়ায় প্রতিবেশীরা আমাদের বাড়ির লোকজনকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানায়। আমরা তাঁকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহীর পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে এবং সর্বশেষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করি।’

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি মীমকে। রাজশাহী মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মীমের মরদেহ দড়িসারদিয়ার গ্রামে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এ ঘটনায় মীমের ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে পিন্টু মিয়াকে প্রধান এবং তার চার ভাই রেজাউল করিম, দোলোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, মিলন হোসেন এবং ভাগ্নে শাকিল হোসেনকে আসামি করে আতাইকুলা থানায় মামলা করেন। তবে মীমের স্বজনদের অভিযোগ পুলিশ শুধু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা ছাড়া আসামিদের গ্রেপ্তারে আগ্রহী হয়নি।

মীমের ছোট ভাই মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এক লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহীর চিকিৎসকরা আগেই বলেছিলেন তোমার বোনের বাঁচার সম্ভাবনা নেই। ডাক্তাররা আমাদের সে সময় যেকোনো খবরের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন।’

এ ব্যাপারে আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য কয়েকদফা অভিযান চালিয়েছে। তবে আসামিরা চতুর এবং পালিয়ে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’ ওসি মনিরুজ্জামান আরো বলেন, ‘নারী নির্যাতন মামলা এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। আসামিরা কোনো মতেই পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।’