ফেসবুকে বন্ধুতার রিকোয়েস্ট। নোটিফিকেশন ক্লিক করতেই চমকে যান তরুণী। এ যে তারই ছবি। এই তরুণীর ছবি দিয়েই ফেসবুকে ভিন্ন নামে আইডি তৈরি করে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠিয়েছে তাকে। অভিন্ন রিকোয়েস্ট ম্যাসেঞ্জারে। দু’দুটি আইডি।
একটি আইডি’র নাম বাপ্পী চৌধুরী অন্যটি রাফি লিখন নামে। কৌতূহল থেকেই রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেন। তারপরই হতভম্ব হয়ে যান কুড়ি বছর বয়সী এই তরুণী। দুটি আইডি থেকে ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হচ্ছিলো তার একান্তই ব্যক্তিগত কিছু ছবি। যে ছবিগুলো তার ফোনে রাখা আছে।
ভেবে পাচ্ছিলেন না এই ছবিগুলো অন্যের কাছে গেল কী করে। দুশ্চিন্তায় মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা। একান্তই ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবিগুলো পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তরুণীকে জানানো হয়, তার পরিচিত জনের কাছ থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।
কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য না মোটেও। তবে একটি বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হন যে, তার ব্যক্তিগত ছবিগুলো অনেকের কাছে চলে গেছে। কি করবেন- ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। ছবিগুলো ভাইরাল হলে কি হবে, মান-সম্মানের ব্যাপার বলে কথা। ঘটনাটি ঘটেছিলো গত ২০ জানুয়ারি।
ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে পরামর্শ করে সহযোগিতা নেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ সদস্যদের। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় ডিএমপি’র হাতিরঝিল থানায়।
তদন্ত শুরু করেন সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ সদস্যরা। সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নাসিরুল্লাহ’র তত্ত্বাবধানে তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত চলছিলো অপরাধীদের শনাক্ত করার কার্যক্রম। ভুক্তভোগী তরুণীর ফেসবুক আইডি থেকে ফেইকআইডি ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চ্যাট করেন পুলিশ সদস্যরা। তরুণীর হয়ে তাদের দাবিকৃত টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশের এজেন্ট নম্বর নেন। নম্বরটির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে কিছু টাকা পাঠানো হয় ওই বিকাশ নম্বরে।
২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওই বিকাশের দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করতে যায় দুই তরুণ। দোকানের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আটক করেন। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপ-পরিদর্শক মহিদুল। শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার দুই আসামি হচ্ছে, মাদারীপুর জেলা সদরের বর্তমানে শেরেবাংলা নগর এলাকার তালতলা সরকারি কলোনির নাহিদুল ইসলাম (১৯) ও মিরপুরের শেওড়াপাড়ার সাজিদুর রহমান (১৯)। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও’র রাইডার সাজিদুর। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাহিদুল। পাঠাও’র পার্সেল সার্ভিসে কাজ করতে গিয়েই এই অপকর্মে জড়িয়ে যায় তারা।
প্রায় মাসখানেক আগে হাতিরঝিল এলাকায় পাঠাও’র একটি পার্সেল পৌঁছে দিচ্ছিলো সাজিদুর। সঙ্গে ছিল নাহিদুল। পথিমধ্যে প্যাকেটটি খুলে এতে একটি ব্যবহৃত মোবাইলফোন দেখতে পেয়ে তা চালু করে। ফোনে রাখা তরুণীর ছবিগুলো দেখেই অসৎ উদ্দেশ্যের জন্ম হয়। ছবিগুলো ব্লু ট্রুথের মাধ্যমে নিজেদের কাছে নেয়। এমনকি ফোনে লগইন করা ফেসবুকটি খোলে ছবি’র তরুণীর আইডিটিও দেখতে পায়। তারপর ফোনটি বন্ধ করে পুনরায় প্যাকেট করে ওই তরুণীর বাসার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, মাসখানেক আগে এক আত্মীয়ের বাসায় ফোনটি ভুলে ফেলে এসেছিলেন তিনি। পরে পাঠাও’র এর পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে ফোনটি আত্মীয়ের বাসা থেকে তার বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছিলো। তিনি ভাবতেও পারেন নি ঘটনাটি এভাবে ঘটেছে।
এ বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নাসিরুল্লাহ জানান, গ্রেপ্তার দু’জন ছাত্র। সাজিদুর ঢাকা কলেজে ও নাহিদুল পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত। তারা কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত কি-না, এ ছাড়াও আরো কোনো অপরাধ করেছে কি-না, এসব বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি বাইক রাউড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তাদের ভূমিকা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
————————-
মজার মজার ভিডিও দেখুন টাচ করে