নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ১১২ প্রার্থী চূড়ান্ত!

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই ১১২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যাঁরা এরই মধ্যে অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই যোগ্যতা শিথিল করে তৃতীয় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম নামের একজন চাকরিপ্রার্থী দুর্নীতি দমন কমিশনে এ অভিযোগ করেছেন। তাঁর লিখিত অভিযোগের সঙ্গে ১১২ জনের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৭ জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। কমিশন থেকে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, উপাচার্যের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাই এ জেলার প্রার্থীদেরই বেশি নেওয়া হয়েছে।

ওই চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও পরিদর্শক এই তিনজন মিলে পছন্দের ১১২ জন প্রার্থীকে স্থায়ী নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করেছেন। তাঁদের অস্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোটা মানা হয়নি। এখন স্থায়ী নিয়োগের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি নিয়োগ কমিটির যাঁরা ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদের কৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন কর্মকর্তার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের একজন অস্থায়ী কর্মকর্তা ও মাদরাসা শিক্ষকদের একটি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতাও জড়িত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফাজিল ও কামিল মাদরাসাগুলো পরিচালনার জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বর্তমান ক্যাম্পাস মোহাম্মদপুরের বছিলায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে গত বছরের ২১ আগস্ট ৫২টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর আবার চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আরো ৪৮ পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দুই বিজ্ঞপ্তি মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করে।

গত ৪ এপ্রিল নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এমনকি প্রার্থীদের নিজ ঠিকানায় প্রবেশপত্রও ইস্যু করা হয়। তারপর হঠাৎ করেই গত ২৭ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আবার গত ২৪ মে ১১২টি পদের জন্য সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ৮ জুলাই থেকে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত।

জানা যায়, সব মিলিয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আবেদনকারীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পদ অনুযায়ী এক হাজার ও ৫০০ টাকা করে ব্যাংক ড্রাফট নেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেতে প্রত্যেক প্রার্থীকে দিতে হয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আর কর্মচারী পদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে সর্বশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর শর্তে বয়স শিথিল করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সের শর্ত শিথিলযোগ্য।

নাম প্রকাশ না করে একজন প্রার্থী বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আগেই প্রার্থী নির্ধারণ করা থাকলে কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিল? প্রায় ১০ হাজার প্রার্থীর কাছ থেকে এক কোটি টাকার ব্যাংক ড্রাফট নেওয়া হয়েছে। এটাও এক ধরনের প্রতারণা। আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ‘যাঁদের আগেই অ্যাডহক (অস্থায়ী) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে তাঁদের সবাইকে যে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা সঠিক নয়। বাইরের প্রার্থীদেরও নেওয়া হবে। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গেই আমাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে চাই।’

চট্টগ্রাম জেলা থেকেই ২৭ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, ‘আমার ড্রাইভার, মালি, কুক এসব পদে সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উচ্চপদে তেমন একটা নেই। আর ২৭ জনের সংখ্যাটা আরো কম হতে পারে। এর পরও যেহেতু বেশি নেওয়া হয়ে গেছে, পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম জেলার প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ রাখা হবে না।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ