স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য- দশম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে জোরপূর্বক বিয়ের চেষ্টা করছেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। ওই ছাত্রীর জন্য তিনি পাল্টেও দিয়েছেন স্কুলের নিয়মকানুন। ইতোমধ্যে সভাপতি ওই ছাত্রীকে বিয়েও করেছেন বলে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। ছাত্রীকে নিয়েই যখন এতকিছু, তখন পরপর দুই দফা তদন্ত হয় কিন্তু তদন্ত শেষ হয় ওই ছাত্রী ছাড়াই।
রহস্যজনক কারণে তাকে হাজির করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে ছাত্রীটির পরিবার মুখে কুলুপ এটেছে ভয়ে। স্কুল কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগের পরও নিয়ম রক্ষার তদন্ত ছাড়া আর কোন কিছুই দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে পুরো তেলকুপি এলাকাজুড়ে। এ নিয়ে দুদফা তদন্ত হলেও মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের তদন্তে কোন কথা বলার সুযোগ না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
তাদের মতে, এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে তাদের। অথচ মঙ্গলবারের তদন্তে তাদের উপস্থিত থাকতে বলেও কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি।
নাটোর সদরের ছাতনী ইউনিয়নের তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জালাল মন্ডলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগটির শুরুতে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও এলাকাবাসীর চাপের মুখে সম্প্রতি ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
এ নিয়ে গত সপ্তাহে ওই স্কুলে একটি সালিশি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকটি মুলতবি করার পর আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। যথারীতি বৈঠকটি শুরুও হয়।
সালিশি বৈঠক হলেও অভিযোগের তদন্ত করতে পুলিশি পাহারায় আসেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দিয়ে বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কক্ষ থেকে বের করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আলাদা ভাবে সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানিয়ে দেন।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফায় স্কুলটিতে সালিশী বৈঠক হবে এবং সেখানে আলোচিত ওই ছাত্রীকে হাজির করা হবে, এমন খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে ছুটে যান।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিযুক্ত সভাপতি, শিক্ষক ও সদস্যদের একটি কক্ষে পৃথক ভাবে ডেকে কথা বলেন। এরপর শিক্ষকদের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলেন তিনি। এ সময় কোন সংবাদকর্মীকে সেখানে থাকতে দেয়া হয়নি।
এদিকে ওই সময় বাইরে অপেক্ষমান এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন কথাবার্তা বলতে থাকে। তাদের অভিযোগ, প্রথম দফায় বৈঠকে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিলেও দ্বিতীয় দফায় তাদের ভেতরেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। আবার, যে ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনা তাকেও এখন পর্যন্ত হাজির করা হয়নি। তাদের প্রশ্ন, তবে তদন্তের নামে কি হচ্ছে?
ছাতনী ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ আলম ও স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচীই জানি না আমরা। এ ব্যাপারে আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছে পুরোপুরি। সবকিছু কৌশলে ম্যানেজ করা হচ্ছে কি-না, সে প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সপ্তাহ খানেক আগের প্রথম তদন্তে শিক্ষা কর্মকর্তা যেসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করেন, সেগুলোই পুনরাবৃতি করেছেন ইউএনও।
অথচ আজকের তদন্তে মূল বিষয়টি ছিল আলোচিত ওই ছাত্রীকে হাজির করা। ওই ছাত্রীকে হাজিরই করা হচ্ছে না। বারবার সকলকে ডেকে এনে শেষে ওই ছাত্রীর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই নেয়াই হচ্ছে না। পুরো ঘটনাই সবার জানা, তবুও কেন এ লুকোচুরি?
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক কামাল সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনিও জানাতে পারেননি আজকের বৈঠকে ইউএনও কি নিয়ে তদন্ত করছেন।
বৈঠকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই ছাত্রীর পিতা আব্দুর রউফকে তার মেয়ে হাজির হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সোমবার এই ঘটনায় স্থানীয় পত্রিকার রিপোর্টগুলো দেখে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তাকে আজ হাজির করা যায় নি।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্ত সভাপতি জালাল মন্ডল একাকী জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু প্রথমে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চাননি। পরে তিনি জানান, তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কেন এখন পর্যন্ত ওই ছাত্রীকে হাজির করা হল না জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রয়োজনে ওই ছাত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে কবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এ বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।