শেষ হয়েছে ২০২৩ সাল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের এ বছরে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ২০২৪ সালের শুরুতে নিয়ম মোতাবেক ২০২৩ সালের সেরা ক্রিকেটারদের পুরস্কৃত করতে যাচ্ছে আইসিসি। এবার ২০২৩ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে ৪ জনকে মনোনয়ন দিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা, যার মধ্যে ৩ জনই ভারতীয়।
২০২৩ সালে ওয়ানডের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে আছেন ভারতের শুভমান গিল, মোহাম্মদ শামি, বিরাট কোহলি এবং নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল। গত বছরটা স্বপ্নের মত কাটিয়েছেন ভারতের ওপেনার শুভমান গিল। ২৯ ম্যাচে ৬৩.৩৬ গড়ে ১৫৮৪ রান করেছেন গিল। ওয়ানডেতে কোনো ভারতীয়র পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। গিলের ওপরে আছেন শুধু শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় এবং সৌরভ গাঙ্গুলী।
২০২৩ সালে পাঁচটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন গিল, রান তুলেছেন ১০০ এর চেয়েও বেশি স্ট্রাইকরেটে। বছরজুড়ে ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ে রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল মিলে এনে দিয়েছেন দারুণ সব সূচনা। বিশ্বকাপেও উজ্জ্বল ছিল এই জুটি।
২০২৩ সালে দারুণ একটি ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন গিল। সবচেয়ে কম বয়সি ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ১৪৯ বলে ২০৮ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন শুভমান গিল। সেই ম্যাচে ভারতের অন্য কেউ ফিফটিও ছুঁতে পারেননি। ৩৪৯ রানের বিশাল এক সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত, জয় পায় ১২ রানে। সব মিলিয়ে বছরটা একদম সোনায় সোহাগা ছিল গিলের জন্য।
আরেক ভারতীয় মোহাম্মদ শামিও ২০২৩ সালে ছিলেন দারুণ ফর্মে। ১৯ ম্যাচে ৪৩ উইকেট শিকার করেন ভারতীয় এই পেসার। আলাদা করে নজর কেড়েছে তার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স।
প্রথম ৪ ম্যাচে একাদশের বাইরে থাকা সত্ত্বেও শামি টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন ২৪ উইকেট নিয়ে। ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট তুলে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন মোহাম্মদ শামি। বিশ্বকাপে ৩ বার ৫ উইকেট তুলেছেন শামি, ১ বার পেয়েছেন ৪ উইকেট।
বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিকও বনে গেছেন শামি। মাত্র ১৮ ম্যাচে তুলেছেন ৫৫ উইকেট। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৫৭ রান খরচায় নেন ৭ উইকেট।
২০২৩ সালটা দারুণ কেটেছে আরেক ভারতীয় বিরাট কোহলিরও। ২৭ ম্যাচে ১৩৭৭ রান করেছেন কোহলি। শামির মত তিনিও আলো ছড়িয়েছেন ঘরের মাঠের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ১১ ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপে ৭৬৫ রান করেছেন কোহলি, ভেঙেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের করা ৬৭৩ রানের রেকর্ড। বিশ্বকাপের এক আসরে একজন ব্যাটারের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড এখন কোহলির দখলে।
বিশ্বকাপে ১১ ইনিংসের মধ্যে ৯টিতেই ৫০ ছাড়িয়েছে কোহলির ইনিংস। টুর্নামেন্টে কোহলি রান তুলেছেন ৯৫.৬২ গড়ে, স্ট্রাইকরেট ছিল ৯০.৩১।
সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৩টি যার মধ্যে একটি আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচে। সেই সেঞ্চুরি দিয়েই ওয়ানডেতে নিজের ৫০তম সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন কোহলি, ভেঙেছেন শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড। ওয়ানডেতে এখন সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক কোহলি।
২০২৩ সালে ২৪ ম্যাচে ৭২.৪৭ গড়ে ১৩৭৭ রান করেছেন কোহলি। ৬ সেঞ্চুরির সাথে ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৮টি। তালিকার একমাত্র অভারতীয় ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল। কিউইদের হয়ে ২০২৩ সালে ২৬ ম্যাচে ১২০৪ রান করেছেন মিচেল। পার্ট টাইম মিডিয়াম পেসে উইকেট তুলেছেন ৯টি, ক্যাচ ধরেছেন ২২টি।
২০২৩ সালে ওয়ানডেতে ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন মিচেল। ১২০৪ রান এই ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে কোনো এক বছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। বছরের শুরুটা ধীরেসুস্থে করে বিশ্বকাপের জন্য সেরাটা জমিয়ে রেখেছেন মিচেল। কেন উইলিয়ামসনকে বিশ্বকাপের বেশিরভাগ সময়েই পায়নি নিউজিল্যান্ড, তার অভাবটা টের পেতে দেননি মিচেল।
বিশ্বকাপে ৬৯ গড়ে ৫৫২ রান করেছেন মিচেল, স্ট্রাইকরেট ১০০ এর চেয়েও বেশি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ২টি, যার মধ্যে একটি ছিল ভারতের মত টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে। সেমিফাইনালে শেষমেশ ভারতের কাছে হার মানতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে, তবে মিচেলের দারুণ পারফরম্যান্স সকলের নজর কেড়েছে।
নারীদের বিভাগে বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের মনোনয়ন পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলি গার্ডেনার, শ্রীলঙ্কার চামারি আতাপাত্তু, ইংল্যান্ডের ন্যাট স্কিভার-ব্রান্ট এবং নিউজিল্যান্ডের অ্যামেলিয়া কের।