সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের শারজাহ এলাকায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ২৩ দিন পর বাংলাদেশি যুবক মো. ইউছুফ হোসেনের (৩৯) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তার ভাই দুবাই প্রবাসী দিদার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউছুফের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসছে। তার মা মাহফুজা খাতুন ও স্ত্রী আছমা বেগম বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
ইউসুফ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি গ্রামের শামছুদ্দিন বেপারী বাড়ির মো. আবদুল্লাহর ছেলে। গত ৯ আগস্ট দুবাইয়ের শারজাহ এলাকার একটি কারখানায় কাজ করার সময় অগ্নিকাণ্ডে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। এরপর থেকে তিনি শারজাহ এলাকায় কুয়েতি হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ইউসুফের মা মাহফুজা খাতুন ও স্ত্রী আছমা বেগম জানান, দুই বছর চার মাস আগে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কর্মের সন্ধানে ইউসুফ ভিজিট ভিসায় দুবাই যান। কিন্তু আকামা না থাকায় তিনি বিভিন্নস্থানে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বাড়িতেও ঠিকমতো টাকা-পয়সা পাঠাতে পারতেন না। দুবাইয়ের শারজাহ এলাকার একটি কারখানায় ৯ আগস্ট কাজ করার সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে তিনি সেখানে অগ্নিদগ্ধ হন। আগুনে তার শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সেখানকার কুয়েতি হাসপাতালে ২৩ দিন তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) ছিলেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
নিহতের ভাই দিদার হোসেন বলেন, ইউছুফের মরদেহ দেশে আনার চেষ্টা করছি। আকামা না থাকায় একটু সময় লাগতে পারে।
ইউসুফের মা মাহফুজা বেগম বলেন, ঋণ নিয়ে ইউছুফ বিদেশে গেছে। এখনো এক টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি। এর মধ্যেই আমার ছেলেটা আগুনে পুড়ে মারা গেল। সংসারে তার স্ত্রী, দুই ছেলে ইয়াসিন আরাফাত (১১) ও তাহসিন (৫) রয়েছে। আমার নাতিগুলো এতিম হয়ে গেলে। শেষবারের মতো আমরা ইউছুফের মুখটা দেখতে চাই। এতে তাকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্ ুরের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্ত্রী আছমা বেগম বলেন, অভাব গোছাতে ইউছুফ আমাদের ছেড়ে বিদেশ গেল। সেখানে তিনি প্রকাশ্যে কাজ করতে পারতেন না। লুকিয়ে কাজ করতে হতো। অভাব ঘোছাতে গিয়ে তিনি এখন আমাদেরকে অভাবি করে গেলেন। তার অভাব কীভাবে ঘুছাবো আমরা?
লাহারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ইউছুফের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। তার মরদেহ দেশে আনতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।