নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থপাচার ও জালিয়াতি বিরোধী অভিযান চালিয়েছে এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর। এই অভিযানে ১০ বিদেশিকে আটক করেছে তারা। বিশাল এ অভিযানে অংশ নেন পুলিশের ৪০০ কর্মকর্তা। বুধবার (১৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ওই বিদেশিদের আটক করা হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক হাব। আর এটিকে ব্যবহার করে সেখানে অর্থপাচার ও জালিয়াতির বড় চক্র গড়ে তুলেছে অপরাধীরা। এসব অপরাধীদের দমনেই মূলত এ অভিযান চালানো হয়েছে। দেশটিতে এসব অবৈধ কাজ পুরোপুরি নিষিদ্ধ রয়েছে। আর এসব অপরাধের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত জেলের বিধানও রয়েছে।
দেশটির বাণিজ্য কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ডেভিড চু ঘোষণা দিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে অবৈধভাবে অর্জিত বা অর্থপাচারের মাধ্যমে গড়া সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেলেই সেগুলো জব্দ করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, কোনোভাবেই সিঙ্গাপুরকে ব্যবহার করে জালিয়াতি এবং অর্থপাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। এসবের প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুরকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে অথবা আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করা অপরাধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে।’
‘অপরাধীদের প্রতি আমাদের বার্তা খুবই সহজ— যদি আপনাদের ধরতে পারি, আমরা আপনাদের গ্রেপ্তার করব। যদি আপনার কাছে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ পাই, আমরা সেগুলো জব্দ করব। আমরা আইনের সর্বোচ্চটা ব্যবহার করে অপরাধীদের সঙ্গে ডিল করব।’
এসব অপরাধী জুয়াসহ অন্যান্য জালিয়াতি করে অন্য দেশ থেকে অর্থপাচার করে নিয়ে আসতেন। বিশাল এ অভিযানের পর সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, যেসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে অবৈধ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা।
এদিকে এ অভিযানে যারা আটক হয়েছেন তাদের সবাইকে বাংলো ও দামি বাড়ি থেকে ধরা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে দামি গাড়ি, নগদ অর্থ ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। যার সবগুলোই জব্দ করা হয়েছে। আর এসব জব্দকৃত সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন সাইপ্রাস, তুরস্ক, চীন, কম্বোডিয়া এবং নি-ভানুয়াতুর নাগরিক। অর্থপাচার ও জালিয়াতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযান চালানো হয়।
মঙ্গলবার দিনভর সেন্তোসা কোভ, তাঙলিন, অর্কাড, হোল্যান্ড এবং রিভারভ্যালিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এসব অর্থপাচারকারী ও জালিয়াতদের আটক করতে গুড ক্লাস বাংলো (জিসিবি), ভবন এবং স্থাবন সম্পত্তিতে হানা দেয় পুলিশ।