দরজায় কড়া নাড়ছে এশিয়া কাপ। এশিয়ার ছয় দলের ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মিশনটি শুরু হবে আগামী ৩০ আগস্ট। টুর্নামেন্ট শুরুর দ্বিতীয় দিনে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ৩১ অগাস্ট ‘বি’ গ্রুপের এই ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সেখানে প্রথম ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে উড়াল দিতে হবে লাল-সবুজদের। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের লাহোরে আফগানিস্তানকে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।
সুপার ফোর নিশ্চিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা ‘বি২’ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামতে হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এই ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে পারে পাকিস্তানকে। যদি স্বাগতিকরা কোয়ালিফাই না করে তবে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ হবে নেপাল।
সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামবে ৯ সেপ্টেম্বর। এই ম্যাচে সাকিব-মুশফিকদেরে প্রতিপক্ষ হতে পারে শ্রীলঙ্কা। যদি সুপার ফোরে খেলার যোগ্যতা লঙ্কানরা অর্জন করতে না পারে তবে সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটি হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। কোয়ালিফাই করা সাপেক্ষে এই ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ভারত। কোনো কারণে ভারতের সুপার ফোর নিশ্চিত না হলে তখন প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে নামবে নেপাল। এই দুই ম্যাচের ভেন্যুই কলম্বো।
এশিয়ার ক্রিকেটের সর্ববৃহৎ আসরটির সূচি প্রকাশের পর থেকেই দেশের ক্রিকেট পাড়ার ‘হট টপিক’ এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকবেন কারা। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ইস্যু এই আলোচনাকে করেছে আরও সরব।
বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন এশিয়া কাপের বহর এবারে বড় রাখতে চায় বিসিবি। ২০ জনের স্কোয়াড নিয়ে এবারের এশিয়া কাপের মিশনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বোর্ডের। প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকবেন সর্বোচ্চ ৩০ জন ক্রিকেটার।
এশিয়া কাপের কন্ডিশনিং ক্যাম্পের আগে ফিটনেস ক্যাম্প হবে ক্রিকেটারদের। এরপর ফিটনেস বিবেচনায় প্রাথমিক স্কোয়াড দিবে বোর্ড। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে ক্যাম্প।
প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের ভেতর থেকে ২০ জনের ডাক পড়বে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডে। বিশেষ অবস্থায় সেই স্কোয়াড সর্বোচ্চ ২২ জনে গিয়ে ঠেকতে পারে। তবে এর বেশি হবে না নিশ্চিত করা হয়েছে বোর্ডের পক্ষ থেকে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রের মারফত নিশ্চিত হয়েছে যে আসন্ন এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন তামিম ইকবালই। যদিও এখনও তামিমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বোর্ড। বাঁহাতি এই ওপেনারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে পিঠের ইনজুরির আপডেট বিবেচনা করে।
ইনজুরি সারাতে ইতোমধ্যেই ইনজেকশন নিয়েছেন টাইগার এই দলপতি। রোববার (৩০ জুলাই) সেই ইনজেকশন দেয়ার পর ইনজুরির আপডেট জানা যাবে। যদি প্রথমবারের ইনজেকশনে কাজ না হয়, তবে সর্বোচ্চ আরও দুই দফায় ইনজেকশন নিতে হইবে বাঁহাতি এই ব্যাটারকে।
তাতেও অবস্থার উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ওয়ানডে দলপতিকে। সেক্ষেত্রে এশিয়া কাপ তো বটেই, বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে যাবেন তামিম। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তামিমের জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট অপেক্ষা করবে বলেই প্রাথমিক স্কোয়াড তো বটেই, এশিয়া কাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডটাও সাজানো হচ্ছে তাকে পরিকল্পনায় রেখে।
যদি তামিমের পক্ষে খেলা সম্ভব না হয় তাহলে অধিনায়কত্বের গুরুভার গিয়ে পড়বে সাকিব আল হাসান অথবা সহ-অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের ওপর। যদিও এই দৌড়ে সাকিবই বেশ এগিয়ে।
এছাড়া প্রাথমিক স্কোয়াডের পাশাপাশি চূড়ান্ত স্কোয়াডেও ডাক পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে অভিজ্ঞ লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও।
যদিও ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের ফেরাটা নির্ভর করছে ফিটনেসের ওপর। জাতীয় দলের ‘নম্বর সেভেন’ পজিশনের দৈন্যদশা কাটাতেই ফের রিয়াদকে এশিয়া কাপের জন্য পরিকল্পনায় রাখছে বোর্ড।
এদিকে হাথুরুসিংহের ‘প্রিয়পাত্র’ সৌম্য সরকারের এশিয়া কাপের প্রাথমিক স্কোয়াডের পাশাপাশি জায়গা করে নিতে পারেন চূড়ান্ত একাদশেও। ফিটনেস ও পারফরম্যান্স বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তার বিষয়ে। যদিও ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন আসন্ন এশিয়া কাপে যে কোন মূল্যেই সৌম্যকে খেলাতে বদ্ধপরিকর হাথুরু।
এশিয়া কাপের আগে লঙ্কান এই কোচের অনুরোধেই নিজেকে প্রমাণের শেষ সুযোগ হিসেবে ইমার্জিং এশিয়া কাপের দলে নেয়া হয়েছিল তাকে। ধারাবিকভাবে পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও সৌম্যর সময় খুব একটা খারাপ কাটেনি এশিয়া কাপের সদ্য শেষ হওয়া মিশনে।
এছাড়াও প্রাথমিক স্কোয়াডের জন্য বোর্ডের পরিকল্পনার রাডারে রয়েছেন রনি তালুকদার, নাঈম শেখ, পারভেজ হোসেন ইমন, জাকির হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্তও। মূলত তামিমের বিকল্প হিসেবেই একাধিক ওপেনারকে বাজিয়ে দেখতে চায় টিম ম্যানেজমেন্ট। চলুন একনজরে দেখে আসি এশিয়া কাপকে সামনে রেখে গড়া বাংলাদেশের সম্ভাব্য স্কোয়াড।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাব্য স্কোয়াড: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস (সহ-অধিনায়ক), নাঈম শেখ, রনি তালুকদার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, পারভেজ হোসেন ইমন, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল হাসান জয়, জাকির হোসেন, এবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।