উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে ‘সত্যিকার যুদ্ধের জন্য’ মহড়া জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন কিম জং উন। গতকাল রাতে মিসাইল উৎক্ষেপণ মহড়া পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রায়ত্ব কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) এ কথা জানিয়েছে। খবর এএফপি।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মিসাইল মহড়া পরিদর্শন করেন কিম জং উন
কেসিএনএর প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, কিম জং উন তার মেয়েকে পাশে বসিয়ে গোলন্দাজ আক্রমণ মহড়া দেখছেন। এ সময় কিম ও তার মেয়ে উভয়েই কালো জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন। ইউনিফর্মধারী সামরিক কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী উত্তর দিক থেকে একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণের ঘটনা শনাক্তের কথা জানায়। একই জায়গা থেকে একসঙ্গে একাধিক মিসাইল ছোড়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও সিউলের কর্মকর্তারা জানান।
আজ সকালে কেসিএনএর প্রকাশিত ছবিতে দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তাদের সন্দেহের সত্যতা প্রমাণ হলো। ছবিতে দেখা যায়, হুয়াসং ইউনিট থেকে একই সময়ে কমপক্ষে ছয়টি মিসাইল ছোড়া হচ্ছে। আক্রমণের কসরত হিসেবে কোরিয়ার পশ্চিম সাগরে নির্দিষ্ট এলাকা লক্ষ্য করে এসব মিসাইল ছোড়া হয় বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
মহড়া পরিদর্শনকালে কিম সামরিক বাহিনী সদস্যদের দুটি কৌশলগত মিশনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো যুদ্ধ নিবৃত্ত করা। দ্বিতীয়টি হলো যুদ্ধের সূচনা ঘটানো। তিনি বলেন, মিসাইল ইউনিটের মতো শাখাগুলোর উচিত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিচিত্র ধরনের সত্যিকার যুদ্ধের মহড়া ক্রমশ নিবিড় করা।
উত্তর কোরিয়া এমন সময় এই মিসাইল আক্রমণ মহড়া করল যখন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পাঁচ বছরের মধ্যে বৃহত্তম যৌথ সামরিক মহড়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমবার থেকে এ মহড়া শুরুর কথা রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহে কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়া বন্ধ না করলে প্রশান্ত মহাসাগর আমাদের (উত্তর কোরিয়ার) শুটিং রেঞ্জে পরিণত হবে। আমরা প্রশান্ত মহাসাগরকে শুটিং রেঞ্জ হিসেবে কত বেশি ব্যবহার করব তা নির্ভর করবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের ওপর।
ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির ডিপার্টমেন্ট প্রধান হিসেবে দলের লেটার প্যাডে দেওয়া বিবৃতিতে কিম ইয়ো জং আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়ার মিসাইল উৎক্ষেপণের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন বলে খবরে বেরিয়েছে। কে ওই হুমকি দিয়েছেন তার পরিচয় জানার আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, আমরা কেবল এটুকু বলে রাখি, কোরীয় উপদ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের উঠোন নয় যে তাদের মেজাজ সমঝে কাউকে চলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি মহড়া বন্ধ না করে তাহলে আমরা জবরদস্তি জবাব দিতে বাধ্য হবো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর দুর্বল দিক বলতে বিমান বাহিনী। আধুনিক যুদ্ধবিমান নেই দেশটির। এ অবস্থায় দেশটি বিমান বাহিনীর দুর্বলতা পুষিয়ে নিতে মিসাইল আক্রমণে ভরসা করছে।
সিউলের ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের প্রধান ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়া গবেষক আন চ্যান-ইল বলেন, উত্তর কোরিয়ার বৃহস্পতিবারের মহড়ার একটাই লক্ষ্য। সম্ভাব্য সংঘাতে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধবিমান ওড়া থামিয়ে দিতে চায়।
গতকালের মহড়ায় দ্বিতীয়বারের মতো কিম জং উনের মেয়েকে তার পাশে দেখা গেছে। উত্তর কোরিয়ার মিডিয়া কখনো দেশটির নেতার মেয়ের নাম প্রকাশ করেনি। তবে ১১ বছর বয়সী মেয়েটির নাম কিম জং-আহ এবং ডাকনাম জু আই বলে জানা গেছে।
সিউলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মু-জিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও মিসাইল উন্নয়ন সংক্রান্ত ইভেন্টগুলোতে জু আইর উপস্থিতি নিয়মিত করা হচ্ছে।