নাসির হোসেন আর বিতর্ক যেন একে অপরের সঙ্গী। জাতীয় দলে থাকা অবস্থায় জড়িয়ে ছিলেন নানান বিতর্কে। ২০১৮ সালে শেষবার ডানহাতি অলরাউন্ডারকে দেখা যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এরপর যেন অনেকটা হওয়ায় মিলিয়ে যান তিনি। কিন্তু স্বরূপে ফিরে এলেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার দ্বিতীয়তে আছেন তিনি।
২০১১ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লাল-সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয় নাসিরের। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছর ছিলেন বেশ ধারাবাহিক। খ্যাতি পেয়েছিলেন ফিনিশার হিসেবে। কিন্তু পরের চার বছর ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর থেকে আছেন জাতীয় দলের বাইরে।
এই লম্বা বিরতিতে জন্ম দেন নানান ঘটনার। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়েছিলেন হাঁটুর ইনজুরিতে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক ভিডিও বার্তা দিয়ে নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন এক উঠতি মডেল। ইনজুরি আর বিতর্ক সব পেছনে ফেলে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিপিএল দিয়ে মাঠে ফেরেন তিনি।
কিন্তু ফেরা হয়নি মনে রাখার মতো। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান মাত্র তিন ম্যাচ। এ ছাড়া দলের তারকা ক্রিকেটার হওয়ার পরও সেবার তাকে ছাড়াই সিলেটে যায় টিম ম্যানেজমেন্ট।
২০২১ সালে জড়ান নতুন বিতর্কে। আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ ছাড়াই একজনের স্ত্রী বিমানবালা তামিমা সুলতানা তাম্মিকে বিয়ে করে হন সমালোচিত। পুলিশের তদন্ত বিভাগ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই বিয়েকে অবৈধ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় আদালতে। সেই বিষয়টি এখনো বিচারাধীন।
সব কিছু পেছনে ফেলে বিপিএলের চলতি আসরে ঢাকার অধিনায়ক হয়ে মাঠে ফেরেন নাসির। শুরুতেই জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। ট্রফি উম্মোচনের দিনে এক সাংবাদিকের সঙ্গে তাচ্ছিল্যে’র সুরে কথা বলেন তিনি। নাসিরকে সেই সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলেন, ‘গত আসরে আপনি দল পাননি, এবার দল পেয়েই অধিনায়ক হলেন। এ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী।’
বিপিএলের নবম আসরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন নাসির হোসেন।
এমন প্রশ্ন শুনে রেগে যান নাসির। জবাবে তাচ্ছিল্যের সুরে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি কে ভাই! সাংবাদিক আপনি, মিডিয়ার? ঠিক আছে, আপনার প্রশ্ন বলেন।’ এরপর সাংবাদিকের কথা শেষে নাসির বলেন, ‘আমার খুব সুন্দর লাগছে। ওয়াও ফিলিংস, ক্যাপ্টেন আমি যেহেতু।’
পরে প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চান নাসির। দল ভালো না করলেও চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত খেলছেন নাসির হোসেন। নিয়মিত রান পাচ্ছেন ঢাকার অধিনায়ক। গতকাল শুক্রবার বরিশাল ফরচুনের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত ছিলেন নাসির। যদিও তার চেষ্টা বৃথা যায়। ১৩ রানে ম্যাচ জেতে সাকিব আল হাসানের বরিশাল।
চলতি বিপিএলে ৬ ইনিংসের ৩টি অপরাজিত ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৩১.২১ স্ট্রাইক রেটে দুই অর্ধশতকে করেছেন ২৬৯ রান। ২৭৫ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে আছেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব। এর চেয়ে মাত্র ৬ রান কম নিয়ে এই তালিকার দ্বিতীয়তে আছেন নাসির হোসেন।
ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এই অফ ব্রেক বোলার। ৭ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারদের তালিকার ৪ নম্বরে আছেন ঢাকার অধিনায়ক। নাসিরের এই পারফরম্যান্স চোখে পড়েছে জাতীয় দলের নির্বাচকদের।
চট্টগ্রামে বিপিএলের দ্বিতীয় পর্ব দেখতে এসে গতকাল শুক্রবার নাসিরের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনার কথা জানান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।
অনেক দিন পর এসেছে (নাসির), ভালো খেলছে। ওকে আগে খেলতে দেন। একজন খেলোয়াড়কে থিতু হতে হবে। একজন খেলোয়াড়ের জন্য অনেক দিন পর এসে পারফর্ম করা বিরাট ব্যাপার। ধারাবাহিকভাবে এই প্রক্রিয়ায় থাকলে অবশ্যই চিন্তা করা হবে।
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, প্রধান নির্বাচক, বিসিবি
ব্যাট হাতে নাসির ভালো করলেও পয়েন্ট টেবিলে ঢাকার অবস্থা খুবই নাজুক। ৬ ম্যাচের মাত্র একটি জিতেছে তারা। ফলে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে আছে রাজধানীর দলটি। তবে এখনো ৬টি ম্যাচ বাকি রয়েছে। দেখা বিষয় এই ফর্ম ধরে রেখে ঢাকাকে কামব্যাক করাতে পারবেন কী নাসির হোসেন!