নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারার উদ্দেশে উড়ে যাওয়া ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এটিআর-৭২ বিমানটি পোখারার নতুন ও পুরাতন বিমানবন্দরের মাঝামাঝি জায়গায় একটি পাহাড়ঘেরা স্থানে আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটিতে ৭২ জন আরোহী ছিলেন। আরোহীদের মধ্যে ৬৮ যাত্রী এবং চারজন ক্রু। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখরার উদ্দেশে যাওয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা অজয় কেসি বলেছেন, ‘আমরা ৩১টি মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। গিরিখাদ থেকে আরো ৩৭টি মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
তিনি জানিয়েছেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে দুই পাহাড়ের মাঝের একটি গিরিগাদে। সেখানে পৌঁছানোর বিষয়টিই এখন তাদের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং।
এর আগে নেপাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র জগন্নাথ নিরুলা বলেছিলেন, ‘উদ্ধার অভিযান চলছে। (দুর্ঘটনার সময়) আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল।’ স্থানীয় টেলিভিশনে দুর্ঘটনাস্থল থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে এবং উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় লোকজনকে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের চারপাশে জড়ো হতেও দেখা যায়।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র সুদর্শন বারতৌলা জানিয়েছেন, তাদের পরিচালিত টুইন-ইঞ্জিন এটিআর ৭২ মডেলের এই বিমানটিতে ৭২ জন আরোহী ছিল। আরোহীদের মধ্যে দু’টি শিশু, চারজন ক্রু সদস্য এবং ১০ জন বিদেশি নাগরিক।
এদিকে দুর্ঘটনার পর শতাধিক উদ্ধারকর্মী পাহাড়ের ধারে ওই দুর্ঘটনাস্থল হাজির হন। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির বয়স ১৫ বছর।
বিশ্বব্যাপী বহুল ব্যবহৃত টুইন ইঞ্জিন টার্বোপ্রপ বিমান এটিআর ৭২ হচ্ছে এয়ারবাস এবং ইতালির লিওনার্দোর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট অনুসারে, সংস্থাটির বহরে ছয়টি এটিআর৭২-৫০০ মডেলের বিমান রয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, নেপালে বিমান দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। কারণ এভারেস্টসহ বিশ্বের ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বতের মধ্যে আটটির অবস্থান এই দেশটিতে এবং এই কারণে আবহাওয়া হঠাৎ পরিবর্তন হতে পারে এবং বিমান চলাচলের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল বিমান দুর্ঘটনার পর মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বলে নেপালের সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটিতে অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে ৫ জন ভারতীয়, ৪ জন রাশিয়ান, ১ জন আইরিশ এবং ২ জন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন।
উল্লেখ্য, দুর্গম পর্বত, বৈরী আবহাওয়া, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবসহ নানা কারণে দক্ষিণ এশিয়ার পার্বত্য দেশ নেপালে প্রায়শই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গত বছরের মে মাসে নেপালের উত্তরাঞ্চলের মুসতাং জেলায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২১ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।