‘এমবাপে একটা বেয়াদপ’- আর্জেন্টিনীয় মহাতারকা

কিলিয়ান এমবাপে বর্তমানে আর্জেন্টিনার জাতীয় খলনায়কে পর্যবসিত হয়েছেন। ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফাইনালের পর দ্বৈরথের তীব্রতা আরও বেড়েছে। এমবাপের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের দাবানল আরও জোরালো হয়েছে।

কিলিয়ান এমবাপেকে এবার তুলোধোনা করলেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত মিউজিশিয়ান কার্লোস আলবার্তো সোলারি। যিনি দুনিয়ায় খ্যাত ইন্ডিও সোলারি নামে। সাংবাদিক মার্সেলো ফিগুয়েরাসের সঙ্গে ‘এল কোহেতে আ লা লুনা’ অনুষ্ঠানে এক কথোপকথনে তিনি সরাসরি এমবাপেকে তীব্র আক্রমণ করে বসেন। বলে দেন, “ও এক অসহ্য ছোকরা।

নেইমার ওঁকে সহ্য করে। এমবাপে এখনই বিশ্বের একনম্বর হতে চায়। আরে ভাই, অন্তত তাঁদের তো সম্মান দাও, যাঁরা তোমার আগেই দুনিয়ার সেরা হয়েছে।”

এমবাপে এই মুহূর্তে দুর্ধর্ষ ছন্দে রয়েছেন। বিশ্বকাপ ফাইনালে রেকর্ড গড়েছেন ক্লাব ফাইনালের ইতিহাসে জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসাবে হ্যাটট্রিক করে। মেসির থেকে এক গোল বেশি করে গোল্ডেন বুটও এবার জিতে নিয়েছেন এমবাপে। ২০০২-এ ব্রাজিলের রোনাল্ডোর পর এই প্ৰথমবার কেউ একটি বিশ্বকাপের সংস্করণে এতগুলো গোল করলেন।

এমবাপে মেসি, ফনটাইনের সঙ্গেই পরের বিশ্বকাপে গোল করে পেরিয়ে যেতে পারেন পশ্চিম জার্মানির প্রাক্তন গোলকিপার গার্ড মুলার (১৪), রোনাল্ডো নাজারিও (১৫), জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোজেদের (১৬)।

তবে এত রেকর্ডের ঘনঘটা সত্ত্বেও এমবাপের সতীর্থদের সঙ্গে মনোভাব সমালোচনা কুড়িয়েছে। পিএসজির দুই সুপারস্টার নেইমার এবং মেসির সঙ্গেও তাঁর ইগোর সংঘাত রয়েছে। মেসির মত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাতারকার সঙ্গে খেললেও নূন্যতম সম্মান না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এমবাপের বিরুদ্ধে। গত অগাস্টেই মন্তেপিয়ারের বিরুদ্ধে যে ম্যাচে পিএসজি ৫-২ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল, সেই ম্যাচেই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়ে যান এমবাপে। মেসির কাছ থেকে ক্রস না পেয়েই সটান মহাতারকাকেই ধাক্কা দিয়ে বসেন এমবাপে। এত দুঃসাহস দেখে মেসিও প্রাথমিকভাবে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

মেসি সৌজন্যে খাতিরে এমবাপের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণই করে গিয়েছেন। তবে এমবাপে বারেবারেই অসম্মান করে গিয়েছেন মহাতারকাকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করে একাধিকবার মেসির মুখের ওপর উদযাপন করেছেন।

এই বিতর্কের একদম সাম্প্রতিক সংযোজন মেসির পিএসজি সংবর্ধনায় এমবাপের গড়হাজির থাকা। লেন্সের কাছে হারের পরেই এমবাপে ক্লাবের কাছ থেকে ছুটি আদায় করে নিউইয়র্কে পাড়ি দিয়েছিলেন এনবিএ ম্যাচে হাজির থাকতে। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু আচরাফ হাকিমি। বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির পিএসজি পদার্পণের মুহূর্তেই এমবাপের এই ছুটি চাওয়া ফুটবল বিশেষজ্ঞদের নজর এড়িয়ে যায়নি।

নেইমারের সঙ্গে তাঁর সমস্যার সূত্রপাত দলের পেনাল্টি-টেকার কে হবেন, তা নিয়ে। সেই সংঘাত এখনও চলছে। বিশ্বকাপের পর মার্কার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমবাপে পিএসজিকে তিন শর্ত দিয়েছে ক্লাবে থাকার জন্য। যে চুক্তির অন্যতম নেইমারের বিতাড়ন। Fichajes-এর প্রতিবেদন থেকেই সাম্প্রতিক আপডেটে জানা গিয়েছে, এমবাপের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে নেইমারকে মাত্র ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডেই বিক্রি করে দিতে চলেছে প্যারিসের ক্লাবটি। ইতিমধ্যেই নেইমারকে নেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছে ইপিএলের তিন ক্লাব- নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ম্যান সিটি এবং চেলসি।

মেসি এমবাপেকে নিয়ে পাল্টা কোনও সংঘাতের পথে না গেলেও আর্জেন্টিনীয় গোলকিপার পাল্টা দেওয়ার কাজ করেছেন বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনীয় ড্রেসিংরুমে এমবাপের নিয়ে কুৎসিত গান গেয়েছিলেন এমি মার্টিনেজ। তারপরে বুয়েন্স আয়ার্সে বাস প্যারেডে মার্টিনেজকেই দেখা গিয়েছিল এমবাপের পুতুল হাতে সেলিব্রেশন করতে। তবে দুই ক্ষেত্রেই মার্টিনেজকেই থামাননি মেসি। যা নিয়ে প্রবল আলোচনার স্রোত বয়ে গিয়েছিল ফুটবল বিশ্বে।