কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে মেসিদের হাতে। এই কাপ জয়ে সব থেকে যে বেশি ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কৃতিত্বের জন্য তার হাতে উঠেছে গোল্ডেন গ্লাভস।
এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন গোলকিপার টাইব্রেকার ঠেকানো বিশেষজ্ঞ হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনাকে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দীর্ঘ তিন যুগ পর তাদের বিশ্বকাপ জয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন।
তবে মার্তিনেজ আলোচিত হয়েছিলেন তার ‘মনস্তাত্ত্বিক খেলা’র জন্য। কলম্বিয়ার এক খেলোয়াড়কে তিনি বলেছিলেন— ‘দুঃখিত, তোমাকে আজ আমি খেয়ে ফেলব।’
বিশ্বকাপ ফাইনালেও ফ্রান্সের বিপক্ষে একই রকম মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু করেছিলেন মার্তিনেজ। আর এই মনস্তাত্ত্বিক লড়াই দিয়েই ফ্রান্সকে টাইব্রেকারের সময় পুরোপুরি এলোমেলো করে দিয়েছিলেন মার্তিনেজ।
টাইব্রেকারের সময় টেলিভিশন ক্যামেরায় মার্তিনেজের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ধরা পড়ে। সমালোচনা হলেও সেগুলো তিনি করেছেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের মনোযোগ নষ্ট করার জন্য। ম্যাচের রেফারি মার্তিনেজকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্কও করেন।
আর্জেন্টাইন গোলকিপার প্রথম যে ব্যাপারটি করেছিলেন, সেটি ছিল ফ্রান্সের অধিনায়ক ও গোলকিপার উগো লরিসের বিপক্ষে।
তিনি টস হতেই গোলবারের দিকে ছুটে চলে যান দ্রুতই। লরিস সেই জায়গায় যাওয়ার পর (সাধারণ টাইব্রেকারের সময় দুই দলের গোলকিপার গোলপোস্টের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকেন) মার্তিনেজ তাকে ‘স্বাগত জানানোর মতো একটা ভঙ্গি করেন।
এমবাপ্পে টাইব্রেকার নিতে আসার সময়ও মার্তিনেজ এমনই ভঙ্গি করেছিলেন।
মার্তিনেজ এখানেই থেমে থাকেননি। এমবাপ্পে পেনাল্টি নেওয়ার সময় তিনি রেফারির কাছে বারবার অভিযোগ করছিলেন যে ফরাসি তারকা বল ঠিক জায়গামতো বসাননি। রেফারি তার অভিযোগ প্রথমে পাত্তা না দিলেও অরলিয়ে চুয়ামেনির সময় বল বসানো ঠিক হয়েছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করেন। কিংসলি কোমানের সময়ও মার্তিনেজ একই অভিযোগ করেছিলেন। এমবাপ্পে সামলে নিলেও চুয়ামেনি, কোমান—দুজনেই মনোযোগ হারিয়ে পেনাল্টি মিস করেন।
চুয়ামেনির সঙ্গে আরেক কাণ্ড করেন মার্তিনেজ। তিনি বল নিয়ে গ্যালারির কাছাকাছি চলে যান। চুয়ামেনির দিকে বল ছুড়ে দেওয়ার সময় সেটি অন্যদিকে দিয়েছিলেন। চুয়ামেনিকে বাধ্য হয়েই বল সেই জায়গা থেকে নিয়ে আসতে হয়। এতে চুয়ামেনি মনোযোগ হারিয়ে বল মেরে দেন পোস্টে।
ফুটবলবিষয়ক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম গোল ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্টিনেজের ‘অস্বাভাবিক’ আচরণের জন্য অভিযোগপত্রও দাখিল করে ফ্রান্স।
এবার নিজের মতামত জানালেন ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিস। সেই আর্জেন্টাইনের মতো করতে পারতেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মার্তিনেজের সেই আচরণের জবাব দিয়ে লরিস বলেন, এমন কিছু কাজ আছে যা আমি করতে পারি না। গোলপোস্টে কাউকে বোকা বানানো, প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দেওয়া এবং গোললাইন অতিক্রম করা… এসব পারা যায় না।
প্রভাবশালী ফ্রেঞ্চ সংবাদমাধ্যম এল’ইকুয়েপকে তিনি বলেন, আমি খুব যুক্তিবাদী এবং সৎ একজন মানুষ। আমি জানি না, কীভাবে এভাবে জিততে হয়। সত্যিই এভাবে হারতে চাইনি।