যশোরের আনোয়ার জাহিদ নামের এক যুবক মালয়েশিয়ায় হত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত জাহিদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করছে তার পরিবার।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকালের পর যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মালয়েশিয়ার সিপাং থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে আনোয়ার জাহিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তিনি যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে।
আখতার হোসেন বলেন, আমার ছেলে জাহিদ যশোরের ঝিকরগাছার রাজাডুমুরিয়া গ্রামের মৃত গোলাম সরোয়ারের মেয়ে ঝুমুর খাতুনকে বিয়ে করে। তাদের সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। গত নয় বছর আগে সে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের প্ররোচনায় অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যায়। জাহিদ এতদিন যা উপার্জন করেছে তার সবটুকুই স্ত্রী ঝুমুর খাতুনের কাছে পাঠাত। একপর্যায়ে স্ত্রী ঝুমুর খাতুন বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করলে জাহিদের সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। কলহের জের ধরে প্রায় ১৫ দিন আগে ঝুমুর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার সময় মালয়েশিয়া থেকে জাহিদের মরদেহ আসবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ঝুমুর চলে যাওয়ার কয়েকদিন পর জাহিদ মালয়েশিয়া থেকে ফোনে আমাদেরকে জানান, তার শ্যালক আইয়ুবসহ মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের কাছে আকুতি জানায়। কিন্তু পারিবারিক কলহ মিটে যাওয়ার আশায় বিষয়টি আমরা আমলে নেইনি। সর্বশেষ সোমবার ভোরে জাহিদ আমাদেরকে জানান, তার শ্যালক আইয়ুব তাকে হত্যা করার জন্য দু’জনকে পাঠিয়েছে। সে আর বাঁচতে পারবে না। একইদিন দুপুরের দিকে ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে জানান, আনোয়ার জাহিদ আত্মহত্যা করেছেন। সঙ্গে একটি ছবিও পাঠান। কিন্তু সেই ছবিতে আত্মহত্যা করার মতো কোনো আলামত দেখা যাচ্ছিলো না।
এরপর পরিবারের লোকজন মালয়েশিয়ায় থাকা পরিচিতজনদের ঘটনাস্থলে পাঠালে তারা সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি। স্থানীয়রা তাদেরকে জানান, আনোয়ার জাহিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে দিয়েছে খুনিরা। খবর পেয়ে মালয়েশিয়া পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। মঙ্গলবার বিকেলে আনোয়ার জাহিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়া থেকে আনোয়ার জাহিদের মরদেহ দেশে আনতে এবং খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।