টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে সিডনিতেই বৈঠক হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। সেখানেই লাল বলের কোচ হতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাতে আপত্তি করেননি চন্ডিকা। বরং সুযোগ-সুবিধার বিষয় নিশ্চিত করতে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
বাকি থাকে সাদা বলের কোচ নিয়োগ। শ্রীধরন শ্রীরামকেই সাদা বলের কোচ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আইপিএলে কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে তাঁকে। এ কারণেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিসিবি। হাথুরুসিংহের নিয়োগও ঝুলে রয়েছে কিছু শর্তের কারণে। বিসিবি চেষ্টা করছে, দুই কোচের মধ্যে সমন্বয় করে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে।
রাসেল ডমিঙ্গো প্রধান কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করার পরই নতুন কোচ নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিসিবি। তিন মাসের নোটিশে পদত্যাগ করেন ডমিঙ্গো। তিনি চাকরি না ছাড়লে বরখাস্ত হতেন। বিসিবির কাছ থেকে এই বার্তা পাওয়ার পরই সমঝোতার ভিত্তিতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ডমিঙ্গো। সেদিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকান এ কোচের নোটিশ প্রিরিয়ড চলছে। বিসিবি চাইলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে কাজে লাগাতে পারে তাঁকে। যদিও বোর্ড কর্মকর্তারা চান না, বিদায়ী কোচকে গুরুত্বপূর্ণ হোম সিরিজে রাখতে।
হাথুরুসিংহে বা শ্রীরামের হাতেই তুলে দিতে চান দায়িত্ব। এই কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে শ্রীরামের শর্ত আর চন্ডিকার তিন সংস্করণে কোচ হতে চাওয়া। ক্রিকেটপাড়ায় জোর গুঞ্জন- চন্ডিকা শেষ পর্যন্ত কোচ নাও হতে পারেন। কিন্তু ভেতরের খবর হলো- বিসিবির কাছ থেকে ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলে লাল বলে কোচ হতেও আপত্তি করবেন না অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ লঙ্কান।
জাতীয় দলের কোচ নিয়োগ দেওয়া যতটা সহজ মনে করা হচ্ছিল, আসলে ততটা না। তিন সংস্করণের জন্য দু’জন ভিন্ন ভিন্ন কোচ নিয়োগ দিতে গিয়ে জটিলতাই বাড়ছে। দেশে দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চালু হওয়ায় ভালো কোচের চাহিদা বেড়ে গেছে। পুরো সময়ের জন্য জাতীয় দলের কোচ হতে চান না তাঁরা। চন্ডিকা ও শ্রীরাম দু’জনেই টি২০ লিগের কোচ। বিসিবির চাকরির পাশাপাশি দেশের লিগের চাকরিও ধরে রাখতে চান তাঁরা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কাজ করার সুযোগ না দিলে মোটা সম্মানী দিতে হবে তাঁদের। সে কারণেই চন্ডিকা বা শ্রীরামকে নিয়োগের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি বিসিবি। শ্রীরামের সঙ্গে বিসিবির বৈঠক হয়েছে ৬ জানুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন সেখানে। যদিও দ্বিপক্ষীয় এ সভা থেকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মতো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, হাথুরুসিংহে ও শ্রীরামকে নিয়ে একটি সমন্বিত কোচিং প্যানেল গড়ে তোলার কথাবার্তাও হচ্ছে। বাস্তবে এটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ হাথুরুসিংহে জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ ছিলেন তিন সংস্করণে। শ্রীরামও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পরামর্শক কোচের অন্তরালে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রীরামের কোচিং পছন্দও হয়েছে বিসিবি কর্তাদের। ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও ভালো ফিটব্যাক পাওয়া গেছে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্মেলনে শ্রীরামকে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত হাথুরুসিংহে বা শ্রীরাম কোচ না হলেও বিসিবি চায় লাল ও সাদা বলের আলাদা কোচ। খেলার বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই পরিকল্পনা।