আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা একজনের মন্তব্য এমনই। কাতারে বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে। ট্রফি নিয়ে উদ্যাপন শেষে খেলোয়াড়েরা ফিরে গেছেন নিজ নিজ ক্লাবে। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের কেউ কেউ এখনো বিশ্বকাপেই ডুবে আছেন। রোমন্থন করছেন বিশ্বকাপ জয়ের নানা মুহূর্তের স্মৃতি। নিকোলাস তালিয়াফিকো তাঁদের একজন।
৩০ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার কাতার থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরে প্রথম এক সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন ট্রফি উদ্যাপনে। এরপর গত ২৭ ডিসেম্বর দীর্ঘ দিনের বান্ধবী ক্যারোলিনা কারবাগনির সঙ্গে বিবাহ সেরে নিয়েছেন। বিশ্বকাপ উদ্যাপন আর বিবাহ শেষে ফ্রান্সে ফিরেছেন গত সপ্তাহে। যদিও লিগ আঁ-র ক্লাব লিঁওর হয়ে এখনো মাঠে নামেননি।
ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ত হয়ে ওঠার আগে কাতার বিশ্বকাপের স্মৃতি ভাগাভাগি করতে চাইলেন তালিয়াফিকো। এ জন্য হাজির হয়েছিলেন টুইচ ব্রডকাস্টে। সেখানেই বিশ্বকাপের বিভিন্ন ম্যাচের স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে ‘ফ্রান্স ফাইনালে না উঠলে আর্জেন্টিনার কী হতো’ বলে ওই কাল্পনিক দৃশ্যপট সামনে এনেছেন।
কথাটা এসেছে গ্রুপ পর্বের পোল্যান্ড ম্যাচের কথা বলতে গিয়ে। ‘সি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে একই সময়ে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড, মেক্সিকো-সৌদি আরব। দুই ম্যাচ শেষে চার দলের সামনেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথ খোলা ছিল। এর মধ্যে পোল্যান্ডের পয়েন্ট ছিল ৪, আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের ৩ করে আর মেক্সিকোর ১।
পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৪৬ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। অন্য ম্যাচে ৫২ মিনিটের মধ্যে সৌদি আরবের জালে দুবার বল পাঠিয়ে দেয় মেক্সিকো। ওই মুহূর্তের সমীকরণ ছিল এরকম—শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুই ম্যাচের ফল একই থাকলে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হবে ঠিকই, কিন্তু গোল ব্যবধানে এক গোলে এগিয়ে থাকবে পোল্যান্ড। কিন্তু আর্জেন্টিনা আরেকটি গোল করলে বিপদে পড়ে যাবে পোলিশরা, বাদ পড়ে যেতে পারে প্রথম রাউন্ড থেকে।
ম্যাচের ওই সময়ে পোল্যান্ডের লক্ষ্য হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা, যেন আর কোনো গোল করতে না পারে। সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে তালিয়াফিকো বলেন, ‘আমরা প্রথম গোলটা দেওয়ার পর পোল্যান্ড আর খেলতে চাইছিল না। এরপর আমরা (৬৭তম মিনিটে) দ্বিতীয় গোলটিও দিয়ে ফেলি। আমার মনে পড়ে ৬০ মিনিটের দিকে পোল্যান্ডের একজন ভাঙা ভাঙা স্প্যানিশে আমাকে বলল, আর আক্রমণ করো না। যা হয়েছে, তোমাদের জন্য যথেষ্ট।’
সেদিন হুলিয়ান আলভারেজের গোলে আর্জেন্টিনা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তবে সৌদি আরবের বিপক্ষে যোগ করা সময়ে এক গোল হজম করে বসে মেক্সিকো। ২-১ ব্যবধানে জিতলেও গোল ব্যবধানে এ গোল পিছিয়ে থাকায় প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় মেক্সিকানরা।
সমীকরণের প্রসঙ্গ টেনে তালিয়াফিকো হাসির ছলে বলতে শুরু করেন, ‘পোল্যান্ড ভেবেছিল মেক্সিকো ২ বা ৩ গোলের ব্যবধানে জিতে যাবে। যে কারণে আমাদের আর আক্রমণে না যেতে অনুরোধ করল। আমি যদি সেদিন গোল করতাম পোল্যান্ড বাদ পড়ে যেত। সবকিছুই তখন বদলে যেত। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলত মেক্সিকো। আর মেক্সিকো ফ্রান্সকে হারিয়ে দিলে একটা ওলট-পালট ঘটে যেত। আমরা চ্যাম্পিয়নও হতে পারতাম না।’