ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গ্যভিরের জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বর পরিদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া পবিত্র এই মসজিদের স্থিতাবস্থার যেকোনও পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্কও করেছে দেশটি।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। এর আগে কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ব্যাপক নিরাপত্তা নিয়ে ইতামার-বেন-গ্যভির গতকাল মঙ্গলবার সকালে আল-আকসা চত্বরে পরিদর্শনে যান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের নতুন সরকারের একজন অতি-ডানপন্থি মন্ত্রীর আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মুসলিম ও ইহুদিদের দুই সম্প্রদায়ের কাছেই আল-আকসা মসজিদটি পবিত্র এবং বেন-গ্যভিরের সেখানে সফরের পরপরই মঙ্গলবার সেখানকার স্থিতাবস্থার যেকোনও পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দেয় ওয়াশিংটন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্য-পিয়েরে বলেন, ‘জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। (আল-আকসা মসজিদে) স্থিতাবস্থাকে বিপন্ন করে এমন কোনও একতরফা পদক্ষেপ ও কাজ গ্রহণযোগ্য নয়।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইসও এ বিষয়ে আলাদাভাবে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইতামার বেন-গ্যভিরের সফরের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
মূলত ইতামার বেন-গ্যভিরের ব্যাপক উস্কানিমূলক বক্তব্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সরকারেও তাকে নিরাপত্তা মন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বেন-গ্যভিরের জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বর পরিদর্শনের ঘটনায় ইসলামিক বিশ্বে ব্যাপকভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলছেন, ‘এই সফরে কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্রাইস আরও বলেন, ‘বিতর্কিত এই সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহুর) কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আজ সরাসরি কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
এদিকে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গ্যভিরের জেরুজালেমের আল-আকসা চত্বর পরিদর্শনের নিন্দা করেছে ফিলিস্তিনিরা। মুসলিম ও ইহুদিদের দুই সম্প্রদায়ের কাছেই পবিত্র এই নগরীতে রয়েছে আল-আকসা মসজিদ এবং ফিলিস্তিনিরা মনে করছে পবিত্র এই স্থানে ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই সফর ‘নজিরবিহীন উস্কানি’।
বিবিসি বলছে, বেন-গ্যভিরকে কড়া নিরাপত্তা প্রহরায় ওই এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। বেন-গ্যভির ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটা কঠোর মনোভাব নিয়েছেন, যা নিয়ে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বাড়ছে।
আল-আকসা মসজিদে এখন শুধু মুসলিমদের প্রার্থনাস্থল এবং সেখানে শুধু নামাজীদেরই প্রবেশাধিকার আছে। তবে বেন-গ্যভির অনেক দিন ধরেই ইহুদিদের সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
আল-আকসা চত্বরের ওপর দাবি নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিক্ততা ও বিভেদ অনেকদিনের। গত নভেম্বরের নির্বাচনের পর নতুন জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উত্তেজনা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে নতুন সরকার পাঁচ দিন আগে শপথ গ্রহণ করে এবং নতুন সরকারের মন্ত্রী পদ পাওয়ার পর এটাই ছিল বেন-গ্যভিরের প্রথম সরকারি কর্ম তৎপরতা।