জাপানে ব্যাপক তুষারপাতে মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৭ জনে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। ক্রিসমাস সপ্তাহান্তে জাপানের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য অংশে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিসমাস সপ্তাহান্তে উত্তর জাপান এবং দেশের অন্যান্য অংশে ভারী তুষারপাতের ফলে মৃত বেড়ে কমপক্ষে ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৯০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জাপানের ফায়ার অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইয়ামাগাতা প্রিফেকচারের নাগাই শহরে বাগির ছাদ থেকে পড়া তুষারের নিচে চাপা পড়ে সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। জাপানের ওই এলাকায় গত শনিবারের মধ্যে ৮০ সেন্টিমিটারেরও (২.৬ ফুট) বেশি তুষার জমা হয়েছিল।
সিএনএন বলছে, প্রধানত পশ্চিম উপকূল বরাবর অঞ্চলসহ জাপানের কিছু অংশ শক্তিশালী শীতকালীন আবহাওয়ার কারণে ভারী তুষারপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলেছেন। এছাড়া তুষারপাতের কারণে হাইওয়েতে যানবাহন আটকা পড়েছে এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বিতরণ পরিষেবা বিলম্বিতও হচ্ছে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা গত সপ্তাহে জানায়, দেশের কিছু অংশে তুষারপাত গড় পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি স্তরে জমেছে।
মূলত জাপান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল আবহাওয়ার সাক্ষী হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির জলবায়ু প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণে তা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
এছাড়া ডিসেম্বরে হোক্কাইডোর মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে তীব্র তুষারঝড় দেখা গেছে এবং দক্ষিণের কিছু অংশ গত সেপ্টেম্বরে শক্তিশালী টাইফুনের পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এর আগে গত জুন মাসে টোকিও ব্যাপক তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়। সেসময় দেশটির তাপমাত্রা রেকর্ড ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শক্তিশালী শীতকালীন আবহাওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে জাপানের উত্তরাঞ্চলে ভারী তুষার পড়েছে। ফলে দেশটির মহাসড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়েছে, বিতরণ পরিষেবা বিলম্বিত হয়েছে এবং গত শনিবারের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ক্রিসমাস সপ্তাহান্তে আরও তুষারপাতের ফলে সোমবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ জনে এবং আহতের সংখ্যা ৯৩ জনে পৌঁছেছে বলে জাপানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে।
মৃতদের মধ্যে অনেকেই ছাদ থেকে তুষার সরানোর সময় পড়ে গিয়ে বা ছাদ থেকে পিছলে যাওয়া বরফের ঘন স্তুপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান।
এদিকে ভারী তুষারপাতের কারণে জাপানের সবচেয়ে উত্তরের প্রধান দ্বীপে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। এর ফলে ক্রিসমাসের সকালে প্রায় ২০ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
যদিও জাপানের অর্থনীতি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতে, দিনের পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়।