অবৈধ হয়ে পড়া আড়াই হাজারের মতো বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। এ জন্য ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের ছয়টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের কাছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের পাঠানো চিঠিতে এই ছয়টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাওয়া হয়। ইতিমধ্যে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে দেশে ফেরার পর এই অবৈধ বাংলাদেশিদের কারাগারে পাঠানো হবে নাকি বিমানবন্দরে তাদের বৃত্তান্ত নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে তা এখনো জানা যায়নি।
ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ২৩, ২৫ ও ২৭ ডিসেম্বর দুটি করে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ শুক্রবার দুটি বিশেষ ফ্লাইটে আট শতাধিক অবৈধ বাংলাদেশি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ২৫ ডিসেম্বর দুটি ফ্লাইটে আট শতাধিক ও ২৭ ডিসেম্বর দুটি ফ্লাইটে আরও আট শতাধিক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, অবশ্যই ইতিহাদ এয়ারলাইন্সকে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ তারা বাংলাদেশি নাগরিক বহন করছে। আইনগত দিকগুলো পুলিশ দেখবে।
সূত্র জানায়, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে বাস করা অভিবাসীদের আটক করতে অভিযান শুরু করেছে আরব আমিরাত সরকার। এতে সেখানে থাকা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে আমিরাতের বিভিন্ন শহরে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী টহল দিচ্ছে। যাদের ভিসার মেয়াদ নেই, যাদের ডকুমেন্টে সমস্যা রয়েছে তাদের ধরতে এই অভিযান চলছে। তবে আমিরাত সরকার অফিশিয়ালি বা স্থানীয় কোনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপরে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি।
জানা যায়, আরব আমিরাতে অবৈধভাবে যারা বসবাস বা কাজ করছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যা অনেক সময় সেখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এতে আরব আমিরাতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটক বা যারা বৈধভাবে ব্যবসাবাণিজ্য করছেন তাদের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এ জন্য অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আজমানসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে।
সম্প্রতি দুবাই গিয়ে সরেজমিনে শহরের পার্ক ও স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত মানুষকে; যাদের মধ্যে বাংলাদেশিই বেশি। ভ্রমণ ভিসায় কাজের সন্ধানে এসে বিপদে পড়েছেন তারা। অনেককে আধপেটা খেয়েই শুয়ে থাকতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। শহরের মতিনা পার্ক, ইউনিয়ন মেট্রো সংলগ্ন পার্ক, ক্রিক নদীর পাড়ে মাঝে মাঝেই জড়ো হন এই অভিবাসীরা। শুয়ে-বসে তারা সময় কাটান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে তারা রাজ্যের সব সুখ নিয়ে জীবনযাপন করছেন। কাছে গেলেই শোনা যায় তাদের কষ্টের গল্প।
অনেক বাংলাদেশি জানান, রুম ভাড়ার টাকা না থাকায় পাবলিক পার্কে তাদের থাকতে হচ্ছে। এভাবেই উন্নত জীবনের আশায় স্বেচ্ছায় বা দালালদের খপ্পরে পড়ে আরব আমিরাতে অবৈধ অভিবাসী হয়ে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন বহু বাংলাদেশি। গ্রেপ্তারের ভয়ে দিনের পর দিন লুকিয়ে থাকছেন অনেকে। দালালরা ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ভ্রমণ ভিসায় কয়েক লাখ তরুণ-যুবককে আরব আমিরাত পাঠালেও তাদের সংখ্যা ঠিক কত তার সঠিক হিসাব নেই দূতাবাসের কাছে।