দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের মধ্যে ছিল গভীর সম্পর্ক। কর্ম না থাকায় এখনি বিয়ে নয় বলে উভয় পরিবারের সম্মতিতে প্রেমিকাকে আংটি পরিয়ে জীবিকার সন্ধানে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান প্রেমিক। প্রায় আট বছর পর দেশে এসে বিয়ের কথা বলতেই প্রেমিকা ও পরিবার বেঁকে বসেন। এ অবস্থায় প্রবাসী প্রেমিক ক্ষোভে কষ্টে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নে চরশ্রীরামপুর মাইজপাড়া গ্রামে।
স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবারের লোকজন জানায়, ওই গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিন ওরফে হাছু মিয়ার ছেলে আজিম উদ্দিন (৩২) মোবাইলে সম্পর্ক গড়ে তুলে পাশের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ঘাগড়া গ্রামের হাসেন মুন্সীর স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে। দীর্ঘদিন সম্পর্কের পর প্রেমিকা চাপ দেয় বিয়ে করার। এ অবস্থায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে এখনি বিয়ে সম্ভব নয় বললে প্রেমিকার চাপের মুখে গত প্রায় আট বছর আগে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আংটি পরিয়ে রাখা হয়।
নিহত আজিম উদ্দিনের মা হাজেরা খাতুন জানান, তাঁর ছেলে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে তাঁর হুবু স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা অব্যাহত ছিল। তার মধ্যে বিদেশ থেকেও গত কয়েক বছরে অর্থ স্বর্ণালঙ্কারসহ বেশ কিছু জিনিসপত্রও পাঠিয়েছে মেয়ের জন্য। এর মধ্যে কথা হয় নভেম্বরে এসে ডিসেম্বরের দুই তারিখ বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফের চলে যাবে। এ অবস্থায় আজিম উদ্দিন গত ২৫ নভেম্বর মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। গত তিনদিন আগেও ওই মেয়ে তাঁর ছেলেকে ডেকে নিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন রেখে দেয়।
পরে জানানো হয় এখনি বিয়ে নয়, আরো ভেবে দেখবেন। এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন আজিম উদ্দিন। গত দুই দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে এক রকম শয্যাসায়ী হয়ে পড়েন। গতকাল সোমবার ভোরে নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে কীটনাশক পান করে গুংগাতে থাকেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নান্দাইল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঈশ্বররগঞ্জ এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি পীরজাদা মোস্তাছিনুর রহমান জানান, ময়মনসিংহ নেওয়ার পথে অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ফের ঈশ্বরগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তবরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। কারো প্ররোচনায় যদি আত্মহত্যা করে থাকে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।