মিরাজ-মুস্তাফিজে মুগ্ধ

গেল কয়েকদিন ধরে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল নিয়েই চলছে উন্মাদনা। তবে গতকাল মিরপুর শেরেবাংলার মাঠে মেহেদী হাসান মিরাজ যেন বাংলাদেশ-বাংলাদেশ বলতে এক প্রকার বাধ্যই করলেন। বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে তুলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার নায়কই এই টাইগার অলরাউন্ডার।

১৩৬ রানে ৯ উইকেটের পতন, লক্ষ্য ১৮৭। ঠিক এ অবস্থায় রোহিত শর্মা ধরেই নিয়েছিলেন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে তার দল। তবে পরবর্তী গল্পটা শুধুই মিরাজময়। তাকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার পথ ধরেই ভারতের বিপক্ষে ১ উইকেটের দারুণ এক জয়! এমন একটা জয়ে গোটা বাংলাদেশ ধরেই ভেসেছে আনন্দের জোয়ারে। জিতিয়ে মিরাজ ৩৯ বলে ৩৮ রানে ও মুস্তাফিজ ১১ বলে ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বাংলাদেশ দলের প্রথম সুপারস্টার মোহাম্মদ আশরাফুল মাতলেন মিরাজ বন্দনায়। এমনকি টাইগারদের ওয়ানডে ইতিহাসেও এই জয় নাম্বার ওয়ান হিসেবে থাকবে। ম্যাচ জয়ের পর ঢাকা পোস্টকে আশরাফুল বলেন, ‘অসাধারণ ব্যাটিং, এক কথাই অবিশ্বাস্য। ব্যাটিংয়ের সময় এতো বিশ্বাস ছিল মিরাজের মধ্যে দারুণ। এছাড়া শেষ উইকেট জুটিতে এটা আমাদের রেকর্ড পার্টনারশিপও ছিল। এই উইকেটে কেউই তেমন সহজে ব্যাটে-বলে করতে পারছিল না, সেখানে মিরাজ ৯৭+ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছে। আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল। আমার কাছে ওয়ানডে ইতিহাসের নাম্বার ওয়ান জয় এটা। হারা একটা ম্যাচকে জয় এনে দিল তারা।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহও মিরাজের এমন ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মিরাজের সাথে মুস্তাফিজকেও প্রশংসার জোয়ারো ভাসিয়ে ঢাকা পোস্টকে রাজিন বললেন, ‘মিরাজের ব্যাটিং অসাধারণ এক কথায়। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে শেষ উইকেট জুটির রেকর্ড এটা। দারুন জুটি করেছে ফিজ-মিরাজ। আজকে যে খেলা খেলেছে মিরাজ, এর আগে আফগানিস্তানের সাথে একটা ম্যাচ খেলছিল এক কথায় চমৎকার। মিরাজকে আমি বলবো যে লুকায়িত প্রতিভার মধ্যে সেরা খেলোয়াড়। মুস্তাফিজ সাথে কাজ করেছি ডিপিএলে। সেখানে দেখেছি সে কিন্তু ভালো ব্যাটিং করে, অনেক কনফিডেন্ট তার মধ্যে রয়েছে। দলের শেষ ব্যাটার হিসেবে তার উপর ভরসা ছিল। কিন্তু সে আজ যেমন খেললো অকল্পনীয়।’

এদিকে দেশসেরা কোচ এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ঢাকা পোস্টকে জানালেন, ‘অসম্ভব একটা পরিস্থিতিতে ওর স্বাভাবিক যেভাবে খেলতে অভ্যস্থ সেভাবেই ক্রিকেটটা খেলল। সেটাই বোধহয় একটা বড় কারণ সফল হওয়ার। ওর স্বভাবের বাইরে যদি খেলতো তাহলে এরকম একটা ইনিংস খেলা সম্ভব হতো না, বা এই ম্যাচ জয় করা সহজ হতো।’

মিরাজ কখনোই মারার বলকে ডিফেন্স করে না বলে ফাহিম বললেন, ‘সাধারণত মিরাজ এমন ক্রিকেটই খেলে। মারার বলকে কখনোই সে ডিফেন্স করে না, সেটা যে কোনো ফরম্যাটই হোক। সেই একইরকম মানসিকতা নিয়েই এ ম্যাচ খেলেছে। তারপরও বলতে হবে এটা একটা অভাবনীয় ইনিংস। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে, এতো কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে। সেটাও আবার এমন একটা উইকেটে যেখানে রান করা কঠিন।’

মিরাজকে সঙ্গ দেওয়া মুস্তাফিজকে নিয়ে ফাহিম বললেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেক সময় আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে। সেকারণেই অনেক সময় যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও সফল হওয়া যায় না। আত্মবিশ্বাস থাকলে কি হতে পারে সেটাই এই ম্যাচের বড় উদাহরণ এই পার্টনারশিপের। মুস্তাফিজের রোলটা খুবই ভালো ছিল, তাকে কৃতীত্ব দিতেই হবে। ভবিষ্যতে এই ব্যাটিং মুস্তাফিজকে আস্থাশীল করবে।’