পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় পুলিশসহ নিহত ৩, আহত ২৪

পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় কোয়েটা শহরে পুলিশের একটি ভ্যানে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত তিনজন নিহত ও আরও ২৪ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পুলিশের এক কর্মকর্তা ও বেসামরিক দুই নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া আহতদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য বলে দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

গত জুনে দেশটির সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণার দুদিন পর বুধবার কোয়েটায় এই হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের স্থানীয় সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ও আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের অনুসারী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)।

কোয়েটা পুলিশের উপমহাপরিদর্শক গোলাম আজফার মাহেসার সাংবাদিকদের বলেছেন, যে গাড়িটি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সেটি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বহন করছিল। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায় পোলিও টিকাদান কর্মসূচিতে নিযুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ওই সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, বুলেলি জেলায় বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন আহত হয়েছেন; যাদের ২০ জনই পুলিশ সদস্য। বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল কুদ্দুস বিজেনজো পুলিশের গাড়িতে হামলার এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি কাপুরুষোচিত এই হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আব্দুল কুদ্দুস বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে জড়িত ও তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এর আগে, সোমবার শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানজুড়ে হামলা চালাতে সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানায় টিটিপি।

এই জঙ্গিগোষ্ঠীটি ২০০৭ সালে পাকিস্তানের জিহাদিরা প্রতিষ্ঠা করেন; যারা ৯/১১’র পর আফগানিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপের জন্য ইসলামাবাদের সমর্থনের বিরোধিতা করার আগে নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষে লড়াই করেছিল। এরপর থেকে পাকিস্তানে টিটিপির কার্যক্রম সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায়।

কিছু সময়ের জন্য তারা পাকিস্তানের দারিদ্র-কবলিত উপজাতীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছিল। পাকিস্তানের রাজধানী থেকে মাত্র ১৪০ কিলোমিটার দূরের ওই এলাকায় নিজেদের টহলের পাশাপাশি ইসলামিক আইনের মৌলবাদী ব্যাখ্যাও চাপিয়েছিল টিটিপি।

২০১৪ সালে টিটিপির যোদ্ধারা সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানদের এক স্কুলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১৫০ জনকে হত্যা করে; যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী ছিল। এই হত্যাযজ্ঞের পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেশটির এই জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।

সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে টিটিপির অনেক যোদ্ধা প্রতিবেশি আফগানিস্তানে পালিয়ে যায়। কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠী পাকিস্তানজুড়ে হামলা চালানোর রসদ সরবরাহ করছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।