নেইমারের চোট। ভুলে যান তার কথা। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের নতুন তারকার জন্ম হবে। ’ পরশু নিজেদের ট্রেনিং শেষে ব্রাজিলের কোচ দলের ভেতরকার সব হাহাকার থামিয়ে দিয়েছেন এভাবে।
এটা ব্রাজিল মিডিয়ার খবর। নতুন শুরুর জন্য এই হাহাকার থামানো জরুরি। নেইমারহীন ব্রাজিলও যে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, এই বিশ্বাস সঞ্চারণেরও খুব প্রয়োজন। সেটার ব্যবস্থা শেষে নতুন বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত ‘নতুন ব্রাজিল’ আজ মুখোমুখি হবে সুইজারল্যান্ডের।
নতুন ব্রাজিল কী? রিচার্লিসন-ভিনিসিয়ুস কিংবা রাফিনিয়া-রোদ্রিগোর ব্রাজিল। এক কথায় একঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারের সমন্বিত রূপ নিয়ে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা এসেছে কাতার বিশ্বকাপে, যেটা রাশিয়া বিশ্বকাপেও দেখা যায়নি। তাই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে দল নিয়ে খুব রঙ্গ করেন তিতে। এত বিকল্প সামনে আছে বলেই কি না ব্রাজিল কোচ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন! তিনি আসলে ম্যাচের আগে কিছুই ফাঁস করতে চান না, ‘দল কিভাবে খেলবে সেটা একরকম চূড়ান্ত। তবে আমার একটা বদভ্যাস হলো, শেষ মুহূর্তে জানানো। কিছু পরিবর্তন আসবেই, পজিশনেও আসতে পারে। দানিলোর জায়গায় এর আগে মিলিতাও খেলেছে। দানি আলভেজের আক্রমণ তৈরির ক্ষমতা আছে। তবে মূল কথা হলো, কে বা কারা খেলবে সেটা আমি বলব না। ’
তাহলে এত কথার অর্থ কী দাঁড়াল? ইনজ্যুরড নেইমার ও দানিলোর জায়গায় ব্রাজিল দলে দুটি বদল অবশ্যম্ভাবী। দানিলোর রাইটব্যাক পজিশনে মিলিতাও কিংবা দানি আলভেজ খেলতে পারেন। আর নেইমারের জায়গায় অনেক বিকল্প আছে কোচের হাতে। হাওয়া যা তাতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার ফ্রেদই ফিরছেন নেইমারের জায়গায়। ঠিক নেইমারের বিকল্প ফ্রেদ হতে পারবেন না। তিনি একদম মাঝমাঠে খেলাটা তৈরি করবেন পাকেতার সঙ্গে। এরপর তিন ফরোয়ার্ডে মিলে সেই আক্রমণগুলোকে সুফলা করবেন। প্রথম ম্যাচেই জমে গেছে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে রিচার্লিসনের জুটি। সার্বিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোলটি গোলরক্ষকের ফিরিয়ে দেওয়া বলে রিচার্লিসনের টোকা হলেও পোস্টে শটটা ভিনির। পরের গোলেও এই উইঙ্গার বাঁ দিক থেকে বলটা পাঠিয়েছিলেন টোটেনহাম ফরোয়ার্ডের কাছে। সুতরাং এই জুটিতে আরো রোশনাই ছড়াবে বিশ্বকাপ। অনেকের চোখে তিতের ওই নতুন তারকা হতে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। কোচও নাকি এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার মাথায় ঢুকিয়েছেন তার পায়ের ম্যাজিকে নেইমারের অনুপস্থিতি ভুলিয়ে দিয়ে দলের জয়ে সাহায্য করতে। ঠিক যেভাবে গোল করে এবং করিয়ে রিয়ালের নতুন ভরসা হয়ে উঠেছেন ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। গত মৌসুমে নিজেকে আবিষ্কার করা এই উইঙ্গার এই মৌসুমে ১০ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট নিয়ে এসেছেন বিশ্বকাপে। কাতারে প্রথম ম্যাচে রিচার্লিসনের গোলে মাতম উঠলে কারিগরি সহযোগিতায় ছিলেন ভিনিসিয়ুস।
ডান প্রান্তটা এখনো ঠিক আশার জায়গা হয়ে ওঠেনি। সার্বিয়ার বিপক্ষে রাফিনিয়ার সহজ মিসে বরং একটু দুশ্চিন্তাই ভর করেছে কোচের মনে। দু-দুটো সহজ সুযোগ গোলরক্ষকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বার্সেলোনার এই উইঙ্গার। সেখানে আছেন ভালো বিকল্প রোদ্রিগো। গতকাল তাঁর বেশ সুনাম করে রাফিনিয়াকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছেন কোচ। তাঁর হাতে আসলে বিকল্পের অভাব নেই। একঝাঁক তরুণে ব্রাজিল রাঙাবে বিশ্বকাপ, ‘আমাদের দলে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই এই প্রজন্মের দূত। দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়। প্রথম ম্যাচে ভিনির অ্যাসিস্ট, রিচার্লিসনের ক্লিনিক্যাল ফিনিশ, পেদ্রোর জোরালো হেড ও জেসুসকে গোলের জন্য মরিয়া হতে দেখেছি। এ ছাড়া রোদ্রিগো যখন দৌড়ায় বলটা তার পায়ে লেগে থাকে আঠার মতো। এরা সবাই নেইমারের শূন্যতা পূরণে তৈরি আছে। ’ একদিক থেকে এটা শূন্যতা হলেও প্রত্যেকের জন্য বড় সুযোগও বটে। এই সুযোগে নতুনরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেন বিশ্বকাপে।
তা ছাড়া এই দলটিও আগের মতো নেইমারসর্বস্ব নয়। তাই হাহাকারও অত প্রকট নয়। বড় তারকার ইনজুরিতে ‘ছোট’রা মিলে নতুন ব্রাজিলের ছবি আঁকবে। সেই ছবিতে সুইজারল্যান্ড কালি ছিটাতে চাইবে। দুইয়ের লড়াইয়ে শেষটা কেমন দাঁড়ায়, সেটিই দেখবে কাতার।