ডায়নামিক স্কোয়াড নিয়ে বিশ্বকাপে ‘সুপারসনিক’ আর্জেন্টিনা

দরজায় কড়া নাড়ছে কাতার বিশ্বকাপ। সময়ের সঙ্গে বাড়ছে উন্মাদনার জোয়ার। তাতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে ফুটবলপ্রেমীরাও। প্রিয় দলকে নিয়ে সমানে চলছে হিসেবনিকেশ। দলের শক্তিমত্তা কিংবা দুর্বলতা নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমীকরণ মেলানোর আলোচনা। কেউ কেউ আবার গভীর চিন্তায় দলের সম্ভাবনার হিসেব নিয়ে মগ্ন।

ফুটবলপ্রেমীদের এই হিসেবনিকেশে সঙ্গী হচ্ছে জনপ্রিয় গণমাধ্যম ডেইলি বাংলাদেশ।

পাঠকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে তাদের প্রিয় দলের শক্তিমত্তা সম্ভাবনা, দুর্বলতা ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছি আমরা। আজ থাকছে লাতিন আমেরিকার অন্যতম সেরা দল আর্জেন্টিনা।

এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট দল আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপের শিরোপধারী হিসেবে অনেকেই তাদেরকে ফেভারিটের তালিকায় রেখেছে। অবশ্য আর্জেন্টিনাকে ফেভারিটের তালিকায় রাখা মোটেও ভুল সিদ্ধান্ত নয়। সেটা তাদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের দিকে একবার চোখ বুলালেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

প্রথমেই চোখ রাখা যাক আর্জেন্টিনার শক্তিমত্তার দিকে। শুরুতেই আসা যাক আর্জেন্টিনার গোলবারের অতন্দ্র প্রহরীদের হিসেবে। এবার আর্জেন্টিনার গোলবার সামলাবেন তিনজন সেরা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, জেরোনিমো রুলি ও ফ্রাঙ্ক আরমানি।

এদের মধ্যে সবার পছন্দের ও আর্জেন্টিনার প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে আসরের শুরু থেকেই মাঠে দেখা যেতে পারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে। ভক্তরা তাকে ভালোবেসে ডাকেন ‘বাঁজপাখি’ বলে। তাকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর্জেন্টিয়ার কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক এমি।

মার্টিনেজ সামলাচ্ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল অ্যাস্টন ভিলার গোলবার। জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন এমি। তাতে হেরেছেন মাত্র ৫ ম্যাচে। বাকি ১৩ ম্যাচে সুরক্ষিত রেখেছেন আর্জেন্টিনার গোলবার, জিতিয়েছেন দলকে। জাতীয় দলের হয়ে শিরোপাও জিতেন একটি।

বাকি দুই গোলরক্ষকের কথাও বলতেই হয়। জেরোনিমো রুলি ও ফ্রাঙ্ক আরমানি দুজনই গোলবারের সামনে বিশ্বস্ত হাত। এমি, রুলি আর আরমানিকে নিয়ে আসরের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক স্কোয়াড আর্জেন্টিনার জন্য হতে পারে অন্যতম শক্তির জায়গা।

রক্ষণভাগে আছেন নাহুইয়েল মোলিনা, গঞ্জালো মন্টিয়েল, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জার্মান পেজেলা, নিকোলাস ওতামেন্ডি, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, মার্ক অ্যাকুনা, নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, জুয়ান ফয়েথ। এদের মধ্যে তিনজনের কথা না বললেই নয়। তারা হলেন রোমেরো, ওতামেন্ডি ও মার্টিনেজ।

টটেনহ্যামের রক্ষণভাগকে বলতে গেলে একাই সামলাচ্ছেন রোমেরো। ওতামেন্ডিও কম যান না। তবে কোচ লিওনেল স্কোলানির সবচেয়ে বড় বাজির ঘোড়াটা হবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ তারকা লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। অলরেডদের রক্ষণভাগকে একাই টানছেন এই তরুণ। কাতারেও তেমন কিছু করবেন বলেই তার উপর বিশ্বাস জমিয়ে রেখেছে আর্জেন্টাইনরা।

মাঝমাঠের সৈনিকদের মধ্যে সবচেয়ে ভরসার তিনটি নাম হলো রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারদেস ও এনজো ফার্নান্দেজ। এছাড়াও আছেন অ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার, গুইডো রদ্রিগেজ, আলেজান্দ্রো পাপু গোমেজ, ও এক্সকুয়েল প্যালাসিওস।

তবে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়ে গেছে লো সেলসোর ছিটকে যাওয়াটা। তবুও বাকিদের নিয়েই মধ্যমাঠে ফুল ফোটাবেন রুদ্রিগো ডি পল ও পারদেসরা। এমনটাই ভক্তদের প্রত্যাশা।

আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ নিয়ে কিছু বললেও কম হয়ে যাবে। এই জায়গায় বিশ্বসেরা সব তারকার ছড়াছড়ি। এদের মধ্যে অধিনায়ক লিওনেল মেসিই তো একটা আকাশ। বাকিদের মধ্যে আছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লাউতারো মার্টিনেজ, জুলিয়ান আলভারেজ, নিকোলাস গঞ্জালেজ, জোয়াকিন কোরেয়া ও পাওলো দিবালা।

এদের মধ্যে জুলিয়ান আলভারেজের কথা আলাদা করেই বলতে হয়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন এই তরুণ। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গার্দিওলার ভরসা হয়ে উঠেছেন। দিবালা টেনে নিয়ে চলছেন ইতালিয়ান ক্লাব রোমাকে। আর মেসি? সে তো চলতি মৌসুমে হয়ে উঠছেন পিএসজির ভরসা।

সব মিলিয়ে কাতারে আর্জেন্টিনার শিরোপা উচিয়ে ধরার সম্ভাবনা এবার বেশ ভালো। তবে ভাগ্য বলতে একটা ব্যাপার আছে। সেটাও মেসির পক্ষেই কতাহ বলবে বলেই বিশ্বাস। কেননা, কিংবদন্তিদের বিধাতা কখনো শূন্য হাতে ফেরান না।