সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড যতোটাই বিশাল, ঠিক ততোটাই ছোট প্রেস কনফারেন্স রুমটা। অস্ট্রেলিয়ান ঐতিহ্যের অংশ ওঠা মাঠটি নিয়ে যতো গল্পই হোক, ফুরাবে না। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন কক্ষটি নিয়ে আলাদা করে বর্ণনা করার মতো কিছু নেই! বুধবার প্রিভিউ ডে-তে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা যখন সেখানে অপেক্ষায় কে আসছে, তখনই ঢুকলেন সাকিব আল হাসান।
তার পর মুহূর্তেই যেন রোশনাই ছড়িয়ে পড়ল ছোট্ট সেই ঘরটায়। ইদানিং সাকিবের সংবাদ সম্মেলনটাও বেশ উপভোগ্য সবার কাছে। মিনিট পনেরোর মতো মুগ্ধতা ছড়িয়ে তিনি যখন চলে গেলেন তখন পাশে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান ফিসফিস করে বলে উঠলেন-কী এমন কথা বললেন তোমাদের অধিনায়ক, তোমরা যে এভাবে হাসিমুখে উপভোগ করলে?
যতোই সেন্স অব হিউমার দিয়ে উত্তর দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, আসল কথাটি বললেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বৃহস্পতিবারের ম্যাচটির আগে নিজেদের শক্তির তারিফ করলেন। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ে তৃপ্তি ব্যাপারটাও থাকল কিন্তু গোপন কথাটি গোপনই রাখলেন!
আসলে এটাই তো হয়। যুদ্ধে নামার আগে দুটো ব্যাপার যে একদমই করতে নেই। এক প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবা। আরেকটি প্রতিপক্ষকে নিজেদের দুর্বলতাটুকু জানানো। কারণ দুর্বলতা জানানো মানে গোপন ফাঁস দেওয়া। নিজেরাই বিপাকে পড়া। সাকিব হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘এসব জানাতে চাই না। তাহলে তো বলে দেওয়া হয়ে গেলো আমার দুর্বলতা কোথায়। সব জায়গায় উন্নতির জায়গা রয়েছে, আসলে উন্নতির তো শেষ নাই। মানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জ্ঞানের যেমন শেষ নেই, উন্নতির ও শেষ নেই।’
কী মনে হচ্ছে প্রোটিয়া পরীক্ষার আগে অনেক বেশি নির্ভার সাকিব? জয়ের ছকটাই ঠিক করে ফেলেছেন? না, মোটেও তেমনটা নয়। সাকিব বরং ডাচদের বিপক্ষে জয়ের পর এখানে জমিনেই পা রাখছেন। বলছিলেন, ‘দেখুন, টি-টোয়েন্টি আসলে মোমেন্টামের খেলা। সো মোমেন্টাম ধরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে সাধারণত ওয়ানডে ম্যাচে পারফর্মারের সংখ্যাটা বেশি থাকে। টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু অত বেশি সুযোগ নেই। কম পারফর্মার থাকবে কিন্তু ওদের পারফর্মমেন্স একটু বড় হতে হয়। সো আমি এটা আশা করছি কালকে আমাদের জন্য আরেকটা সুযোগ যে এগারো জন খেলবে তার মধ্যে থেকে কারো একজনের হিরো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হোবার্টে জয়ের নায়ক ছিলেন তাসকিন আহমেদ। এখানে সেই হিরোটা কে হতে পারেন? এবার বেশ সিরিয়াস উত্তর সাকিবের, ‘আমি যেটা বললাম যে ওপেনারদের সুযোগ আছে ২০ ওভার ব্যাটিং করার, কেন তারা করতে পারবে না। আমি বিশ্বাস করি তারা করতে পারবে। কিংবা আমাদের বোলাররা বোলিং করেছে যেভাবে কেন আবার আমরা ১০ উইকেট নিতে পারবো না। সো আমাদের মাইন্ডসেটটাই থাকবে ওরকম। আমরা খোলা মনে যেতে চাই। উপভোগ করতে চাই খেলাটা। আক্রামণাত্বক থাকতে চাই, অবশ্যই এক্সাইটিং ক্রিকেট খেলতে চাই। দিন শেষে হাসি মুখে ফিরে আসতে চাই।’
দিনশেষে হাসিমুখ মানেই তো জয়। কিংবা মাথা উঁচু করে লড়াই। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? টি-টোয়েন্টিতে যদিও আগাম কাউকে ফেভারিট তকমা দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ইতিহাসকে অবজ্ঞা করবেন কীভাবে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচটার আগে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলেছে সাতটি ম্যাচ। কোন লাকি সেভেনের পালা শেষ হলেও হারই হয়েছে নিত্যসঙ্গী। সাতটিতেই হার। সবশেষটা গতবছরের বিশ্বকাপে। আবুধাবিতে যেখানে ৬ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ!
কিন্তু লড়াইটা অস্ট্রেলিয়াতে বলেই আশার প্রদীপটাও জ্বালিয়ে রাখতে পারেন টাইগার ভক্তরা। একটা ইতিহাস সঙ্গী করেই তো শুরু বিশ্বকাপ মিশন। ২০০৭ আসরে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচে উইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর দেড় দশকে সুপার এইট, টেন কিংবা টুয়েলভে ১৬টি ম্যাচ খেলেও জয় ছিল সোনার হরিণ। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দুঃস্বপ্ন পেছনে ফেলেছেন সাকিব-তাসকিনরা। এবার কিছু হারানোর ভয় না রেখে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা!