ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন যে কৌশল নিচ্ছে রাশিয়া

ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। কিয়েভসহ বড় শহরে গত দুদিনে প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

পানি সরবরাহ ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা অচল হয়ে গেছে। খবর বিবিসির।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার দখল করা অনেক এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। এমন অবস্থায় তিন লাখ রিজার্ভ সেনা তলব করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনজুড়ে এভাবে ব্যাপক হামলার ঘটনা গত কয়েক মাসে দেখা যায়নি। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যখন রাশিয়া প্রথম ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন এ রকম কিয়েভের আশপাশের এলাকায় হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া।

কিন্তু পরে কিয়েভ থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হওয়ার পর মূলত পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো দখলে রাখতেই রাশিয়া মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর রাশিয়া আবার হামলা শুরু করেছে।

এ বিষয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তিনিই এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার তৈরি একটি সেতুর বিস্ফোরণের জন্য তিনি ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন ওই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও রাশিয়া ইউক্রেনে পুরাদস্তুর সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে না। তিনি মনে করেন, আসলে তারা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে একটা বার্তা দিতে চাইছে।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া প্রথমে কিয়েভে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনে সরকার পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকাগুলো দখল করে নেওয়া এবং দক্ষিণের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। তারা কিয়েভ বা উত্তরের এলাকায় সাফল্য পায়নি কিন্তু পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ এলাকায় কিছুটা সফলতা পেয়েছিল।’

কিন্তু গত ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ন্যাটোর ব্যাপক সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে রুশ বাহিনীকে অনেকটা হটিয়ে দিতে পেরেছে। রাশিয়ার দখলে ছিল, এমন প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা ইউক্রেনের বাহিনী আবার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো তারা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে গাড়ি বোমা হামলা করে রুশ ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। ইউক্রেনীয়রা সাফল্য পেতে থাকলে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণে যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারবে।

ইস্তানবুলভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক মুরাত আসলান বলেন, এসব হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জনগণের কাছেও প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করতে সক্ষম। ক্রিমিয়ার ব্রিজে হামলায় এটা প্রমাণ হয়েছে যে, রাশিয়ার সেনারা দেশকে বাইরের হামলা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছে না। ফলে তিনি নিজের দেশের জনগণকে জানাতে চান যে, রাশিয়ার ওপর হামলা হলে তারা শক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই সঙ্গে রাশিয়া ইউক্রেনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এ বার্তাও দিতে চায়, তারা কোনোভাবেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা মেনে নেবে না।’