ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর মাহসা আমিনী নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হওয়া হিজাববিরোধী বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় অন্তত ৯২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। রোববার অসলো-ভিত্তিক ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এই তথ্য জানিয়েছে।
হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২১ বছর বয়সী মাহসা আমিনীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনী।
পুলিশি নির্যাতনে আমিনীর প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এই ঘটনার পর ইরানে গত তিন বছরের মধ্যে বৃহত্তম বিক্ষোভ শুরু করেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ইরান হিউম্যান রাইটস বলছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এক এলাকায় শুক্রবার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে আরও অন্তত ৪১ জন মারা গেছেন। ওই অঞ্চলের একজন পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বালুচ সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ হিজাববিরোধী বিক্ষোভ উসকে দিয়েছে।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই বিপ্লবের পর এবারই প্রথম ইরানের হিজাববিরোধী আন্দোলনকারী নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাবেশ হয়েছে। শনিবার বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি শহরে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
ইরানের সংখ্যালঘু কুর্দিদের আবাসস্থল দেশটির পশ্চিমাঞ্চল। মাহসা আমিনীও কুর্দি অধ্যুষিত দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দা। তার মৃত্যুর পর ওই অঞ্চলে প্রথম ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ধীরে দেশটির অন্যান্য সব শহরে ছড়িয়ে পড়ে। টানা ১৬ রাত ধরে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভকারীদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
শনিবার রাজধানী তেহরানে অবস্থিত দেশটির শীর্ষস্থানীয় অতি-রক্ষণশীল দৈনিক কায়হানের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় দেশটির সরকারি ওই সংবাদমাধ্যমের অফিসে মলটভ ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে তারা।
ইরানের বিক্ষোভকারীদের হত্যা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম। তিনি বলেছেন, ইরানের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এসব কর্মকাণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সমাবেশে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে, বলেছে আইএইচআর। ইরানি কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও আন্দোলনে প্রাণহানির সংখ্যা পর্যালোচনা করছে এই মানবাধিকার সংস্থা।
এর আগে, লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তারা ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে ৫৩ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। গত সপ্তাহে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজ অ্যাজেন্সি বিক্ষোভে ৬০ জনের মতো মারা গেছেন বলে জানায়।